পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে শান্তি আসবে না

জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ রোববার বিকেলে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’। ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বরছবি: তানভীর আহাম্মেদ

পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের কাজের অগ্রাধিকারের মধ্যে পার্বত্য চুক্তির বিষয়টি রেখে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের জনগণের একাংশকে অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ রোববার বিকেলে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন। সমাবেশে পার্বত্য এলাকায় সন্ত্রাসের ঘটনায় মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনসহ বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করা হয়।

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ এই সমাবেশের আয়োজন করে। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন এবং পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জনগণ ও ছাত্রদের সংগঠন সমাবেশে যোগ দিয়ে সংহতি প্রকাশ করে।

সম্প্রতি ‘খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর গুলিবর্ষণ, হত্যা, ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের বিরুদ্ধে’ এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন।

সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম বলেন, স্বাধীনতার পর যখন পার্বত্য এলাকার বাসিন্দাদের স্বীকৃতি দেওয়া হলো না, তখন থেকেই পাহাড়ে অশান্তি শুরু হয়। পরে সেখানে সেটেলারদের (বাঙালি) বসতি স্থাপন করার মধ্য দিয়ে সমস্যা আরও তীব্রতর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি করা হলেও তার মূল বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। বিশেষ করে এই চুক্তি মোতাবেক যে স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন গঠন করার কথা, তা এখনো করা হয়নি। পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে না।

বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, বারবার পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ওপর হামলা হচ্ছে। এটা পুরো জাতির জন্যই লজ্জাকর ও দুঃখজনক। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে পাহাড়ি মানুষদের কথা শুনতে হবে। তাদের ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, বাংলাদেশ কেবল বাঙালির নয়, বহু জাতির, বহু ধর্মের, বহু সংস্কৃতির রাষ্ট্র। সংবিধান ও জীবনযাত্রার আচরণের ভেতর দিয়ে এই বহুত্ববাদের প্রকাশ ঘটাতে হবে। এটিই প্রকৃত গণতন্ত্র।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে বৈষম্যের কথা বলা হয়েছে, তা কেবল চাকরিবৈষম্যের মধ্যে সীমিত নয় বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খায়রুল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশের জনগণের একাংশকে তাদের ন্যায্য নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে এই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা খালেকুজ্জামান লিপন বলেন, পাহাড়ের বাসিন্দাদের মনে আস্থা ও বিশ্বাসের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে জাকির হোসেন বলেন, জুম পাহাড়ে আগুন জ্বালানো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। বৈষম্য দূর করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন অধিকারকর্মী দীপায়ন খীসা। সমাবেশে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে পার্বত্য এলাকায় সন্ত্রাসের ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন, জুম্ম জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গুলিতে নিহত পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসা দেওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধবিহার, ঘরবাড়ি ও দোকানপাটের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সংলাপ শুরু এবং সরকারের অগ্রাধিকার কর্মসূচি হিসেবে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা।

আরও পড়ুন