‘ও একটা পারফেক্ট মেয়ে ছিল’
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বন্ধু সুরমা সরদারের মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়েছিলেন আফসানা করিম রাচি। জানতে চেয়েছিলেন, মেয়েদের জন্য ক্যাম্পাসে কোনো ব্যান্ডমিন্টন কোর্ট আছে কি না। কিন্তু সুরমা বার্তাটি সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পারেননি। যখন দেখেছেন, তখন আর বন্ধু জীবিত নেই।
ব্যান্ডমিন্টন, হ্যান্ডবল, নাচ-গান, উপস্থাপনা—সবকিছুতেই পারদর্শী ছিলেন আফসানা। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দেওয়া বন্ধুরা বুঝে উঠতে পারছেন না, কী থেকে কী হয়ে গেল! সুরমার ভাষায় ‘ও একটা পারফেক্ট মেয়ে ছিল’।
আফসানা করিম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের সামনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় তাঁর মৃত্যু হয়। ওই রাতেই তাঁর মরদেহ ঢাকার বাসায় নেওয়া হয়।
বুধবার সকালে গ্রীন রোডে আফসানার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাসার নিচের গ্যারেজে লাশবাহী ফ্রিজার গাড়িতে তাঁকে রাখা হয়েছে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। এক ভাই মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে তাঁর মা সেখানে গেছেন। বাসায় গিয়ে জানা যায়, ইতিমধ্যে তিনি রওনা হয়েছেন। আফসানার এই মৃত্যুতে নেমে আসা শোকে বোনদের কান্না কোনোভাবেই থামছিল না।
আফসানার মামা রেজাউল করিম ভাগনি সম্পর্কে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা বোনগুলো পড়াশোনায় খুবই মেধাবী। মাত্র এক মাস হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দিয়েছে। বাসার বাইরে পরিবার ছাড়া কখনো একা থাকেনি। হলে উঠলেও বাসা থেকেই যাতায়াত করত বেশি। হ্যান্ডবল টুর্নামেন্টের জন্য কয়েক দিন ধরে ক্যাম্পাসে থাকছিল।’
দুই দিন আগে বন্ধুরা মিলে মানিকগঞ্জ ঘুরে এসেছিলেন আফসানা। সে কথা মনে করে তাঁর বন্ধু সুরমা বলেন, ‘ও খুব প্রাণচঞ্চল ছিল। সুন্দর করে কথা বলা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক আয়োজন—সবকিছুতেই অংশ নিত। এই এক মাসেই সবার খুব আপন হয়ে যায়।’
দুর্ঘটনার আগের কথা মনে করে সুরমা প্রথম আলোকে বলেন, দুপুর থেকে মেসেজে কয়েকবার আফসানার সঙ্গে কথা হয়। কোথায় যাচ্ছে, কী করছে—এসব। ক্যাম্পাসে মেয়েদের ব্যান্ডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা আছে কি না, তা নিয়ে কথা হয়।
সুরমা বলেন, সাধারণত সন্ধ্যা হলে সবাই ক্যাম্পাসে দলবদ্ধভাবে বের হন। কিন্তু আফসানা হয়তো জরুরি কোনো কাজে বের হয়ে চিরতরে নাই হয়ে গেল। তিনি জানান, দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক একটি ফেসবুক গ্রুপে একটি ছবি দেখতে পান। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে সেটা আফসানা। তখন দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে নিশ্চিত হন।
‘এখনো আমরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পুরোটা চিনে উঠতে পারিনি। মাত্র এক মাস হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটে গেল,’ বলেন সুরমা।
বেলা একটার দিকে আফসানার মা বাসায় ঢোকেন। মেয়ের অকালমৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন তিনি। একপর্যায়ে লাশবাহী গাড়িতে থাকা মেয়ের মরদেহের কাছ থেকে তাঁকে সরিয়ে নেন স্বজনেরা। এরপর জানাজার জন্য তাঁর মরদেহ নিয়ে গাড়িটিও বাসা ছাড়ে।
আফসানার গ্রামের বাড়ি শেরপুরে। সেখানেই তাঁকে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।