আওয়ামী লীগের শোষণের সঙ্গে জড়িত বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকদের বিচারও হতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খানফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারের পাশাপাশি তাদের শোষণ ও বাক্‌স্বাধীনতা হরণের সঙ্গে জড়িতদের বিচারও করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, ইতিহাসের প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের প্রয়োজন যদি ফুরিয়ে যায়, তাহলে দলটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে আজ মঙ্গলবার বেনার নিউজ বাংলা আয়োজিত ‘কী চাই নতুন বাংলাদেশে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন।

এতে আলোচকদের সবাই আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার দাবি করেন। তাঁরা আরও বলেন, সংস্কার জরুরি। সংস্কার না করে নির্বাচন আয়োজন করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক আহমদ ছফার একটি বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আহমদ ছফা বলেছিলেন ‘বুদ্ধিজীবীদের কথা শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না’। সেই সময়ে বুদ্ধিজীবীরা ঠেলায় পড়ে বাংলাদেশি হয়েছিলেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলে তাঁরা নিজেদের আখের গুছিয়েছিলেন। তখন বুদ্ধিজীবীদের বিচার হওয়া দরকার ছিল।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, এখন আওয়ামী লীগের শোষণের সঙ্গে জড়িত বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ সবার বিচার হওয়া উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি গত ১৬ বছরে কী ভূমিকায় ছিল প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী দল। আগে আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিল। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ হয়েছে। ইতিহাসের প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের প্রয়োজন যদি ফুরিয়ে যায়, তাহলে দলটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যেমন মুসলিম লীগ হয়ে গেছে।

অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, হত্যাকারী ও ফ্যাসিবাদ কায়েমকারীদের বিচার আগে হতে হবে। বিচার না হলে সেটা হবে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের সঙ্গে প্রতারণা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই; বরং একটা গল্প সামনে নিয়ে আসা হয়েছে যে তিন হাজার পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। এটা জুলাই-আগস্টে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে সেই হত্যাকে ‘জাস্টিফাই’ (যৌক্তিকতা তৈরি করা) করার চেষ্টা।

শফিকুল আলম বলেন, শহীদদের রক্ত যাদের হাতে আছে, তাদের বিচার হবেই। যত দ্রুত সম্ভব বিচার করা হবে। তবে বিচারপ্রক্রিয়া যেন বিতর্কিত না হয়, সেটাও খেয়াল রাখা হবে।

অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মহাখালীতে নিহত জাহিদ হোসেনের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন বক্তব্যের শেষ দিকে বলেন, তিনি দেশের জন্য এক ছেলেকে দিয়েছেন। প্রয়োজনে আরেক ছেলেকেও দেবেন। লাগলে বাবা হিসেবে তিনিও যাবেন।

জাহাঙ্গীর হোসেনের কথার সূত্র ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘বিদ্যমান যে রাজনৈতিক দলগুলো আপনারা সমঝোতার রাজনীতি শুরু করে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে যাচ্ছেন। তারা এই বাবার কথা নোট করে রাখবেন।’

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলে তারা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ (গোপন) দল হয়ে যাবে। নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগের কী হবে। বিএনপি হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়। তিনি আরও বলেন, গত ১৬ বছরে এবং এই গণ-অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার বিএনপি।

মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের আগে বিচার হবে, তারপর জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে তারা আসবে কি আসবে না।

লেখক ও গবেষক মোবাশ্বার হাসান বলেন, নতুন বাংলাদেশে মানবাধিকারকে শ্রদ্ধা করতে শিখতে হবে। নতুন বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলবে না।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বেনার নিউজ বাংলার প্রধান শরীফুজ্জামান। বক্তব্য দেন অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত গোলাম নাফিসের মা নাজমা আক্তার। বেনার নিউজের কয়েকজন সাংবাদিকও বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেনার নিউজ বাংলার সিনিয়র কনটেন্ট ম্যানেজার আশীফ এন্তাজ রবি।

আরও পড়ুন