পুরোনো টিমকে তো সরে যেতেই হবে: কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা
বিদ্যমান সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতার কারণে দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি বলেন, ‘যেকোনো সরকার যখন দায়িত্ব নেবে, তার নিজস্ব টিম (দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী) লাগবে। তাহলে পুরোনো টিমকে তো সরে যেতেই হবে।’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ এ কথা বলেন। সংখ্যালঘু, নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও যুবকেরা সরকারি সেবা কতটুকু পান, সে বিষয়ে গবেষণাটি করেছে রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (আরআইবি)। এতে সহযোগিতা করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে), অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
গত দুই মাসে ষোলো আনার মধ্যে চার আনা কাজ করতে পেরেছেন বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি বলেন, সিস্টেমটা এমন হয়ে যাচ্ছে যে যেকোনো কাজ পড়ে থাকছে। এর দুটো কারণ রয়েছে। একটা হচ্ছে কেউ কেউ কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে আগ্রহ পাচ্ছে না। আরেকটা হচ্ছে চাকরিটা থাকবে কি না, সেই ভয়।
যেকোনো সরকার যখন দায়িত্ব নেবে, তার নিজস্ব টিম লাগবে উল্লেখ করে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘তাহলে পুরোনো টিমকে তো সরে যেতেই হবে।…যে কারণে আমাদের বাচ্চারা প্রাণ দিল—কোটা নয় মেধা, প্রতিযোগিতা ও মেধা; আমি যদি ওটাকে ধারণ করি এবং আমি যদি পেশাগত জায়গায় দেশকে নিয়ে যেতে চাই; আমি এটা ধারণ করব এবং সে ক্ষেত্রে আমাকে এই মানুষগুলোকে সরাতে হবে।’
পেশাগত ও দক্ষতার দিক থেকে আরও যোগ্য মানুষ আনতে হবে বলেও মনে করেন উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি বলেন, ‘ওরা যদি সত্যি একটা প্রফেশনাল গ্রুপ (পেশাদার) হতো আর পার্টিসান (দলীয়) না হতো, তাহলে সত্যি আজকে আমাদের এত বড় বেগ পেতে হতো না।’ তবে প্রশাসনে কেউ কেউ পেশাদার আছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পগুলোর জন্য শক্তিশালী মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা রেখে যেতে চান বলেও জানান শারমীন মুরশিদ। নারীদের ওপর সহিংসতা কমানোর লক্ষ্যে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠনের কথাও তিনি জানান।
গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত
সরকারি সেবায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর অভিগম্যতাবিষয়ক এই গবেষণার ফলাফল আজকের অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন আরআইবির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক রুহি নাজ। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা—এই ৯ জেলায় গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণাটি সংখ্যাগত নয়, গুণগত। এই গবেষণায় ৫১১ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ৪০ শতাংশ শহরের এবং ৬০ শতাংশ গ্রামের।
গবেষণায় পিছিয়ে থাকা ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও যুবক—এই চার ধরনের মানুষ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবিকা, বাসস্থান ও সম্পদের মালিকানা এবং নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের মতো পাঁচ ধরনের সেবা কতটুকু পান, তা দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে নগরে বসবাসকারী ৭০ শতাংশ মানুষ এসব সেবা পান না। আর তাঁদের মধ্যে গ্রামে বসবাসকারী ৯০ শতাংশ মানুষ এসব সেবা পান না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. রওনক জাহান। তিনি বলেন, এসব আলোচনা সাধারণত সরকার ও উন্নয়নকর্মীদের মধ্যে হয়ে থাকে। স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এসব আলোচনায় অনুপস্থিত থেকে যান। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নতুন পদ্ধতি দাঁড় করতে গেলে সময় লাগবে উল্লেখ করে রওনক জাহান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যারা পুরোনো ব্যবস্থায় অভ্যস্ত, তারা হুট করে পরিবর্তন মানতে চাইবে না।
দেশের ৫১ শতাংশ মেয়ের বাল্যবিবাহ হয় বলে জানান অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। তিনি বলেন, আইন আছে, নীতি আছে, প্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে নানাভাবে নষ্ট করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
নারীর ক্ষমতায়ন থেকে শুরু করে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক কিছু অর্জন করেছে উল্লেখ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিপিজের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান বলেন, সফলতার সেসব বিষয় নিয়ে সামনের দিকে তাকানো যেতে পারে।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সচিব সেবাস্টিন রেমা, মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ানসহ অনেকে।