ফিস্টুলায় একা নারী দিশাহারা হয়ে পড়েন

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ শুক্রবার ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব অবস্টেট্রিক ফিস্টুলা সার্জনসের (আইএসওএফএস) নবম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের একটি অধিবেশনের অতিথিরাছবি: প্রথম আলো

সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে ফিস্টুলা এখনো অবহেলিত একটি রোগ। দেশে ১৭ হাজারের বেশি নারীর ফিস্টুলা আছে। তাদের ৮২ শতাংশই চিকিৎসার বাইরে। জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ফিস্টুলা ব্যবস্থাপনার জন্য রোগটির বিজ্ঞানসম্মত নিবন্ধন পদ্ধতি জরুরি হয়ে পড়েছে।

আজ শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব অবস্টেট্রিক ফিস্টুলা সার্জনসের (আইএসওএফএস) নবম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিনে ফিস্টুলা বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা এ কথাগুলো বলেন। দুই দিনের এই সম্মেলন আয়োজনে সহায়তা করেছে অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইউরোলজিক্যাল সার্জনস, ইউএনএফপিএ, ইউএসএআইডি, আইসিডিডিআরবিসহ ১০টি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। বাংলাদেশের প্রায় ৪০০ প্রতিনিধি ছাড়াও আফ্রিকা, এশিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের ৯১ জন ফিস্টুলা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক এই সম্মেলনে অংশ নেন।

আজ দুপুরের একটি অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় সরকার গঠিত স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য ও আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানূর রহমান বলেন, দেশে ফিস্টুলা আক্রান্ত নারীর অনুমিত সংখ্যা ১৭ হাজার ৪৫৭ জন। তাঁদের মধ্যে গত বছর অস্ত্রোপচার হয়েছে ৩ হাজার ১০৯ জনের। এর অর্থ ৮২ শতাংশ নারী চিকিৎসার বাইরে আছেন।

প্রসবে জটিলতা, বিলম্বিত প্রসব বা কিছু অস্ত্রোপচারের কারণে নারীর যোনিপথ ও পায়ুপথের সংযোগ ঘটে। এর ফলে প্রস্রাব ধরে রাখা সম্ভব হয় না। নিয়মিত প্রস্রাব ঝরতে থাকে। প্রায় সব ক্ষেত্রে আক্রান্ত নারী শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হন। প্রথমে স্বামী, পরে সন্তানসহ পরিবার এবং এক সময় সমাজ তাঁকে এড়িয়ে চলে। একা নারী দিশাহারা হয়ে পড়েন। একটি অধিবেশনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. আবু জাফর বলেন, ‘ফিস্টুলা শুধু রোগ নয়, এটি একটি দুর্যোগ।’

আজ দুই অধিবেশনের মাঝে বিশিষ্ট ফিস্টুলা বিশেষজ্ঞ ও আইএসওএফএসের সভাপতি অধ্যাপক সায়েবা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ফিস্টুলা নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে। মানুষকে সচেতন না করলে, প্রশিক্ষিত জনবল না বাড়ালে, বেশি নারীকে মানসম্পন্ন সেবা না দিলে এই লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, ‘ফিস্টুলার জন্য একটি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।’

নিবন্ধন ও সচেতনতা জরুরি

ফিস্টুলা প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার জন্য নিবন্ধন জরুরি। তবে দেশে ফিস্টুলা বিষয়ে সর্বজনগ্রাহ্য নিবন্ধন নেই। ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান একেকভাবে নিবন্ধন করছে। একটি গ্রহণযোগ্য নিবন্ধন ফরম তৈরি করার কাজ করছে আইসিডিডিআরবি। দুপুরের অধিবেশনে আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানূর রহমান বলেন, আরও ভালো সেবা পেতে রোগীর জন্য এই নিবন্ধন দরকার। ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা আরও ভালো করার জন্য সেবাদাতাদের জন্য এই নিবন্ধন কাজে লাগে। নীতিনির্ধারণেও প্রয়োজন এই নিবন্ধনের। তিনি বলেন, রোগ পরিস্থিতি জানতে পরিমাপের প্রয়োজন হয়। নিবন্ধন হচ্ছে পরিমাপের একটি উপায় বা হাতিয়ার।

পৃথক একটি গোলটেবিল সভায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা ও উপায় নিয়ে বক্তব্য দেন আইনজীবী রাশনা ইমাম, আব্দুন নূর তুষার প্রমুখ।

সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী ফিস্টুলা প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় ৯ দফা ঢাকা ঘোষণা গৃহীত হয়। তাতে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জন করতে ফিস্টুলা বিষয় সহজলভ্য ও মানসম্পন্ন মাতৃস্বাস্থ্য সেবা, সচেতনাতা বৃদ্ধি, রোগ নির্ণয় ও দ্রুত চিকিৎসা, কাউন্সেলিং, প্রশিক্ষিত জনবল, মানসম্পন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, নৈতিকতা, পুনর্বাসন ও গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে।