নিজেদের অঞ্চল ‘আজাদের’ লড়াই করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন, দাবি রোহিঙ্গা তরুণের
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় গুলিবিদ্ধ হন রোহিঙ্গা তরুণ মো. মুহিব উল্লাহ। নিজেদের অঞ্চলকে ‘আজাদ’ করতে তাঁরা মিয়ানমারের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এই রোহিঙ্গা তরুণ বলেন, একে-৪৭, এম-১৬-সহ নানা অস্ত্র তিনি চালাতে পারেন। গত বুধবার সকালে তমব্রু সীমান্তের ওপারে দুই পক্ষের গোলাগুলির সময় তাঁর গায়ে গুলি লাগে। একই সময়ে হামিদুল্লাহ নামে তাঁর এক সঙ্গী নিহত হন। তাঁরা রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সদস্য।
মুহিব উল্লাহ (২৩) মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে সীমান্তের ওপারে গিয়েছিলেন। গুলিতে আহত হয়ে এখন তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর ডান পাশে বুকের নিচে এবং ডান হাতে গুলি লাগে। গতকাল বৃহস্পতিবার অস্ত্রোপচার করে বুকের গুলিটি বের করা হয়েছে। তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে চিকিৎসক জানান।
আজ শুক্রবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মুহিব উল্লাহ শয্যায় শুয়ে আছেন। তাঁর বুকের নিচের অংশ এবং ডান হাতে ব্যান্ডেজ। হাতেও অস্ত্রোপচার করা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
মুহিব উল্লাহর ভাষায়, ‘আমরা আমাদের অঞ্চল আজাদ করতে গিয়েছিলাম। ৮৫ জনের একটি দল ২০১৮ সাল থেকে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। সে দেশের আর্মির সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন সময় গোলাগুলি হয়।’
মুহিব উল্লাহ বলেন, তাঁদের বাড়ি ছিল মিয়ানমারের মংড়ুতে। ২০১৭ সালে তাঁদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর মা, বাবা, ভাই, বোনসহ তাঁরা টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে আসেন। জাদিমুরা ক্যাম্পে তাঁরা থাকতেন। তাঁর বাবার নাম দিলদার আহমেদ। চার ভাই এক বোনের মধ্যে তৃতীয় মুহিব উল্লাহ ক্যাম্পে ইংরেজি শিক্ষা নিয়েছেন। ক্যাম্প থেকে চার বছর আগে মিয়ানমারে গিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন।
মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘তাঁরা আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমরা প্রতিশোধ নিতে গিয়েছি। আমাদের ৮৫ জনের দলের সবাই অস্ত্র চালাতে পারেন। আমাদের কাছে একে-৪৭, এম-১৬-সহ অনেক অস্ত্র রয়েছে। মিয়ানমারের জঙ্গলে আমরা থাকতাম। সেখানে খাওয়াদাওয়া হতো।’
মুহিব উল্লাহ বলেন, তাঁদের দলের নাম রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। তবে এই দলের নেতা কে, কার কথায় যুদ্ধে গেছেন, এসব বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। নিজের দলের নেতাকে না চিনলেও রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহকে চেনেন বলে দাবি করেন মুহিব উল্লাহ। তিনি বলেন, আতাউল্লাহর কথা তিনি শুনেছেন, তবে কখনো দেখা হয়নি। আরসার সঙ্গে কী নিয়ে আরএসওর বিরোধ, তা-ও তিনি জানেন না।
এই রোহিঙ্গা তরুণ বলেন, আরএসওর ৮৫ জনের এই গ্রুপটির মতো আরও ৩-৪টি গ্রুপ রয়েছে। ৮৫ জনের সবার হাতে অস্ত্র থাকে। রয়েছে গ্রেনেডও।
আরএসওর এই সদস্যের দাবি, গত মঙ্গলবার রাত থেকে আরএসওর সদস্যদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, সশস্ত্র গ্রুপ রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের সঙ্গে গোলাগুলি হয় তাঁদের।
মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘গত মঙ্গলবার রাত থেকে মিয়ানমারের দিকে গোলাগুলি শুরু হয়। একপর্যায়ে ভোরে আমরা তাদের ঘিরে ফেলি। আমার কাছে ছিল একে-৪৭। ফজরের আজান দেওয়ার পর সকাল ছয়টার দিকে আমার গায়ে গুলি লাগে। একই সময় হামিদুল্লাহ নামে আমাদের আরেকজন গুলিতে মারা যান।’
গুলিতে আহত হওয়ার পর মুহিব উল্লাহকে প্রথমে কুতুপালং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে আছেন তাঁর বোনজামাই মো. শাকিল। শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৭ সালে মংড়ু থেকে তাঁরা টেকনাফে আসেন। এক বছর পর মুহিব উল্লাহ যুদ্ধ করতে মিয়ানমারে চলে যান। গত বুধবার গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাঁদের খবর দেওয়া হয়। তাঁরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, হাসপাতালে আনার পর গতকাল তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে।
কয়েক দিন ধরে তমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। গত বুধবার সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গাদের বসতঘরে আগুন দেওয়া হয়। এর পর থেকে সেখানকার মানুষ আতঙ্কে আছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, শূন্যরেখায় বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা বাহিনীর হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। ফলে সেখানকার প্রকৃত পরিস্থিতি জানা যাচ্ছে না। তবে যতটুকু খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, বুধবারের ঘটনায় আশ্রয়শিবিরে প্রায় ৫৫০টি বসতঘর পুড়ে গেছে। ৭০ থেকে ৮০টি ঘর এখনো অক্ষত।