মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, সবজির মতো ২৯টি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। গতকাল শুক্রবার এই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিমের সই করা এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ এর ৪ (ঝ) ধারার ক্ষমতাবলে কতিপয় নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত দামে কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের অনুরোধ করা হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন এই প্রজ্ঞাপনে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া ২৯টি পণ্যের উৎপাদন খরচ কত, তা-ও তুলে ধরা হয়েছে। এর ভিত্তিতে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পণ্যগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৪৫ টাকা ৭৮ পয়সা। তা উৎপাদক পর্যায়ে ১৫১ টাকা ৮১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৬২ টাকা ৬৯ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সা দরে বিক্রি করতে হবে। একইভাবে গরুর মাংসের উৎপাদন খরচ ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে গরুর মাংসের কেজি ৬০৫ টাকা ১৩ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ৬৩১ টাকা ৬৯ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন থেকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলা (আমদানিকৃত) ৯৮.৩০ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) ১০৫.৫০ টাকা, পাঙাশ (চাষের) ১৮০.৮৭ টাকা, কাতল (চাষের) ৩৫৩.৫৯ টাকা, গরুর মাংস ৬৬৪.৩৯ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৭৫.৩০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৬৫.৪০ টাকা, দেশি রসুন ১২০.৮১ টাকা, আদা (আমদানিকৃত) ১৮০.২০ টাকা, শুকনা মরিচ ৩২৭.৩৪ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০.২০ টাকা, বেগুন ৪৯.৭৫ টাকা, আলু ২৮.৫৫ টাকা, খেজুর জাইদি ১৮৫.০৭ টাকা দরে বিক্রি হবে। আর সাগরকলা (হালি) ২৯.৭৮ টাকা, ডিম প্রতিটি ১০.৪৯ টাকা ধরে বিক্রি হবে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র দে প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে এই কাজ বাস্তবায়ন করবে। দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই মাঠে থাকবেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কৃষি বিপণন আইন প্রয়োগ করবেন। কৃষি বিপণন আইনে জরিমানাসহ নানা ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে।
সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর মধ্যে খুচরা বাজারে সাধারণ মানের খেজুর প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাইদি খেজুর ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে বাজারে এর বাস্তবায়ন দেখা যায় না। এর আগেও সয়াবিন তেল, চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার।
তবে এই ২৯টি পণ্যের নতুন নির্ধারিত দাম বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। নিখিল চন্দ্র দে বলেন, ‘এই ২৯টি পণ্যের মূল্য সব অংশীজনের সঙ্গে আলাপ করে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এর বাস্তবায়ন সম্ভব।’
জানতে চাইলে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সরবরাহ ও চাহিদা বাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে। মুক্তবাজারের সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি না হলে নির্ধারণ করে দিয়ে মূল্য কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়।