কাতার সঠিক তথ্য না দেওয়ায় বিভ্রান্তি: আইএলওর কর্মকর্তা

কাতার সরকার বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে নির্মাণকাজে যুক্ত অভিবাসী কর্মীর মৃত্যুর সঠিক সংখ্যাটা দিতে পারছে না বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে মনে করে আইএলও
ছবি: সংগৃহীত

কাতার সরকার বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে নির্মাণকাজে যুক্ত অভিবাসী কর্মীর মৃত্যুর সঠিক সংখ্যাটা দিতে পারছে না। এ কারণে বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে নিহত অভিবাসীদের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিঙ্গাপুরের একটি কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কাতার দপ্তরের প্রধান ম্যাক্স টুনন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য জানান। ৬ ডিসেম্বর থেকে সিঙ্গাপুরে আইএলওর উদ্যোগে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও আরব অঞ্চলের চার দিনের আঞ্চলিক বৈঠক শুরু হয়েছে।

গত বছর যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১০ সালে কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের সুযোগ দেওয়ার পর থেকে আরব দেশটিতে ৬ হাজার ৭৫১ অভিবাসী কর্মী মারা গেছেন। এসব অভিবাসী কর্মী বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার নাগরিক।

আইএলওর হিসাব অনুযায়ী বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের সময় কাতারে কতজন অভিবাসী কর্মী মারা গেছেন, তা জানতে চাইলে কাতারে আইএলও দপ্তরের প্রধান বলেন, গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনটিতে কারা কর্মরত অবস্থায় মারা গেছেন, সেটি স্পষ্ট করা হয়নি। তবে ওই প্রতিবেদনে নিহত মানুষের যে সংখ্যা বলা হয়েছে, তার সব কটিই যে কর্মস্থল–সংশ্লিষ্ট নয়, সেটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কাতারে কর্মরত অভিবাসীদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ দক্ষিণ এশিয়ার নাগরিক। তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির অর্থনীতির সব ক্ষেত্রেই যুক্ত। কাজেই কাজে থাকার সময় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে—এমনটা অনুমান করে কোনো সিদ্ধান্তে আসাটা সমীচীন নয়।

ম্যাক্স টুনন বলেন, কাতার সরকার নিজে এ সংখ্যা দিতে পারছে না বলেই সমস্যাটি দেখা দিয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে আইএলও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হতাহত কর্মীদের বিষয়ে কাতার সরকার কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করে, সেটা বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের বিষয়ে একটি সামগ্রিক পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কাতার সরকার, সে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠান এবং মন্ত্রণালয় ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করছে। সব কটি তথ্য এক জায়গায় সন্নিবেশিত করে বিশ্লেষণের পর একটি সংখ্যা দাঁড় করানোর কাজটি রীতিমতো দুঃসাধ্য। তিনি আরও বলেন, আইএলওর প্রতিবেদনে ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে, যেখানে মৃত্যুর ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত, পুনরায় সুরতহাল প্রতিবেদন, শ্রম পরিদর্শনের মতো পরামর্শগুলো দেওয়া হয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে অভিবাসী কর্মী এবং তাঁর পরিবার যেন ক্ষতিপূরণ পায়। মৃত্যুর কারণ কী, সেটা চিহ্নিত করা এবং এসব তথ্যের মাধ্যমে ভবিষ্যতে একই ধরনের বিয়োগান্ত পরিণতি রোধ করা।

ম্যাক্স টুনন জানান, গত বছর নভেম্বরে প্রকাশিত আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে কাতারে কর্মস্থলে দুর্ঘটনার কারণে ৫০ জন মারা গেছেন। আর গুরুতর আহত হয়েছেন ৫০৬ জন। এ ছাড়া একই বছরে হালকা আহত হয়েছেন ৩৭ হাজার অভিবাসী কর্মী। ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশ, খাত, বয়স ও লিঙ্গ বিশ্লেষণ করে হতাহত হওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্মাণপ্রক্রিয়া, বিশেষ করে স্টেডিয়াম ও প্রশিক্ষণ সুবিধাসংশ্লিষ্ট নির্মাণকাজের দেখভাল করে থাকে কাতারের সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লিগেসি। সুপ্রিম কমিটির মহাসচিব হাসান আল থাওয়াদি গত সপ্তাহে স্থানীয় একটি টিভিকে বলেছেন, গত ১২ বছরে বিশ্বকাপ–সংশ্লিষ্ট নির্মাণকাজে যুক্ত ৫০০ থেকে ৬০০ অভিবাসী কর্মী মারা গেছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইএলও কাতার দপ্তরের প্রধান ম্যাক্স টুনন বলেন, ‘তিনি এ সংখ্যা কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে পেলেন, তা আমি জানি না। কারণ, কাতার সরকার এর আগে জানিয়েছিল, স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত তিনজন এবং অন্যান্য খাতে ৩৭ জন অভিবাসী মারা গেছেন। হাসান আল থাওয়াদি নিজেও এই সংখ্যা আগে উল্লেখ করেছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইএলওর সর্বশেষ প্রতিবেদনে নিহত অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর সংখ্যা নিরূপণ করতে গিয়ে কাতারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তার উল্লেখ রয়েছে। তবে এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমরা যে পদ্ধতি অনুসরণ করে অভিবাসী কর্মীর মৃত্যুর সংখ্যার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে পেরেছি, হাসান আল থাওয়াদির দপ্তর একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি।’ তিনি জানান, কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩২ হাজার অভিবাসী কর্মী যুক্ত ছিলেন, যা তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের মোট অভিবাসী কর্মীর মাত্র ২ শতাংশ।