ডিমের মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণ শীর্ষক গবেষণার ধারণাটি কীভাবে এল? গবেষণাটির প্রেক্ষাপট যদি বলতেন।
দোলন রায়: আসলে আমরা অনেক দিন ধরেই দূষণ, দূষক ও তার প্রভাব নিয়ে কাজ করছি। এর আগে আমি মাছ ও মাছের খাদ্যদূষক নিয়ে গবেষণা করেছি। সবাই কমবেশি ডিম খায়। এ কারণে ডিমের মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণ শীর্ষক গবেষণা করার বিষয়ে আমাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়।
গবেষণার জন্য শুধু ঢাকা শহরকেই কেন বেছে নিলেন?
দোলন রায়: ঢাকা জনবহুল শহর। ঢাকা দূষণেরও শহর। এই শহরে খাদ্যে দূষণ-ভেজালের অনেক প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তা ছাড়া আমাদের গবেষক দলটির বেশির ভাগ সদস্যই ঢাকায় থাকেন। সবকিছু মিলিয়ে গবেষণার নমুনা সংগ্রহের জন্য আমরা ঢাকাকে বেছে নিই।
গবেষণার জন্য ঢাকার ছয়টি বাজার থেকে খামারে উৎপাদিত ডিম সংগ্রহ করেছেন আপনারা। কোন পদ্ধতিতে বাজারগুলো নির্বাচন করলেন?
দোলন রায়: আমরা অনেকটা দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বাজার ছয়টি নির্বাচন করেছি। তবে ঢাকার যে বাজারগুলোয় ডিমের জোগান বেশি, সেখান থেকেই নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে আমাদের অগ্রাধিকার ছিল।
ঢাকার ৬ বাজার থেকে ১২টি করে মোট ৭২টি ডিম সংগ্রহ করেছিলেন আপনারা। নমুনার এই সংখ্যাকে কি যথেষ্ট মনে করেন?
দোলন রায়: বলা যায়, আমরা একটা প্রাথমিক গবেষণা করেছি। সে হিসেবে আমরা ৭২টি নমুনা নিয়ে গবেষণা করেছি। তবে নমুনা বেশি হলে ভালো। কিন্তু এ বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে যে একেকটা নমুনায় (ডিম) এতগুলো ধাতু বিশ্লেষণ করা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।
গবেষণায় ডিমে ১০টি ভারী ধাতুর উপস্থিতি খোঁজা হয়। বিষয়টি কিসের ভিত্তিতে ঠিক করলেন? এই ১০টির বাইরে ডিমে আরও কোনো ভারী ধাতু কি থাকতে পারে?
দোলন রায়: যে ধাতুগুলো ক্ষতিকর বলে বিবেচিত, সেগুলোর উপস্থিতি দেখার জন্যই আমরা ১০টি ধাতু নির্বাচন করি। এই ১০টির বাইরে আর কোনো ধাতুর উপস্থিতি ডিমে আছে কি না, তা জানার জন্য পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
ডিমে ১০টি ভারী ধাতুর সব কটিরই উপস্থিতি পাওয়া গেছে গবেষণায়। এর মধ্যে ছয়টির উপস্থিতি সর্বোচ্চ অনুমোদিত মাত্রার (এমপিএল) মধ্যে রয়েছে। বাকি চারটির উপস্থিতি এমপিএলের চেয়ে বেশি। এই ফলাফল কী ইঙ্গিত দিচ্ছে? এটা কতটা বিপদের বার্তা দিচ্ছে?
দোলন রায়: খাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত যেকোনো ধাতুর উপস্থিতিই খারাপ। এর কারণে হৃদ্যন্ত্র, কিডনি ও যকৃৎ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। ফলে ডিমে চারটি ভারী ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতির যে তথ্য আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, তা অবশ্যই উদ্বেগের কারণ।
দস্তা, তামা, সিসা ও লৌহ—এই চার ভারী ধাতুর উপস্থিতি ডিমে মাত্রাতিরিক্ত পাওয়া গেছে। এই ধাতুযুক্ত ডিম খেলে তা মানুষের জন্য কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে?
দোলন রায়: মাত্রাতিরিক্ত দস্তায় রক্তশূন্যতা ও ক্ষুধামান্দ্য হয়। অতিরিক্ত তামার উপস্থিতিতে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, পেটে অস্বস্তি ইত্যাদি হয়। অতিরিক্ত সিসা কার্ডিওভাসকুলার ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করে, উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায়। অতিরিক্ত লোহা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, শ্বাসপ্রশ্বাসে জটিলতা, খিঁচুনি, বিষণ্নতা ইত্যাদির জন্য দায়ী।
ডিমে এসব ভারী ধাতু এল কী করে? ডিমে ভারী ধাতুর উৎস নিয়ে আপনাদের কোনো পর্যবেক্ষণ বা গবেষণা আছে?
দোলন রায়: ডিমে এসব ভারী ধাতুর মূল উৎস পোলট্রি ফিড। এ ছাড়া বিভিন্ন ফিড অ্যাডিটিভসও (পশু-প্রাণীর পুষ্টিতে ব্যবহৃত উপকরণ) এসব ভারী ধাতুর উপস্থিতির কারণ। মাছের খাবার নিয়ে আমাদের একটি গবেষণা আছে। সেখানে বিষয়টি উঠে এসেছে।
ডিমকে গরিবের আমিষ বলে। তবে গরিব-ধনীনির্বিশেষে সবাই কমবেশি ডিম খায়। এ অবস্থায় ডিমকে নিরাপদ করার জন্য আপনার পরামর্শ কী?
দোলন রায়: ডিমকে নিরাপদ করার জন্য প্রথমে মুরগিকে নিরাপদ খাদ্য দিতে হবে। পাশাপাশি মুরগির জন্য নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থা করাও জরুরি। এ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।