মায়ের কোল থেকে রাজশ্রীকে কেড়ে নিল ডেঙ্গু
এখনো মায়ের দুধ ছাড়েনি। বয়স মাত্র ১০ মাস। সন্তানের এমন চলে যাওয়া কীভাবে মেনে নেবেন মা বীথি ধর। গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলেন মেয়ের চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সেটা যে মেয়ের অন্তিমযাত্রা হবে, তা ভাবতে পারেননি মা-বাবা। তাই দুধের শিশু রাজশ্রী ধরকে হারিয়ে কান্না যেন থামছেই না বীথির।
১০ মাসের রাজশ্রী সোমবার ভোররাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। শনিবার তাকে ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালটিতে। ওই দিন রাতেই তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছিল। আজ মঙ্গলবার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে ডেঙ্গুতে রাজশ্রীসহ দুজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়। অপরজনের নাম এলিনা হক (৩৫)। তিনিও সোমবার এই হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলায়।
রাজশ্রীর বাবা রাজীব ধর একজন স্বর্ণকার। তাঁদের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার ধানপুরা এলাকায়। রাজীব পরিবার নিয়ে তাঁর কর্মস্থল উপজেলার মোহছেন আউলিয়া এলাকায় থাকেন। সেখানে তাঁর দোকান রয়েছে। রাজশ্রীর এক ভাই রয়েছে। তার নাম রাজবীর ধর (৬)। সে শিশুশ্রেণির ছাত্র।
রাজীব ধর বলেন, রাজশ্রীর জ্বর এলে শুক্রবার তাকে ডাক্তার দেখাতে শহরে নিয়ে আসেন। এনায়েত বাজারে এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। শনিবার ডাক্তার দেখান। ডেঙ্গু নিশ্চিত হয় সেদিন। চিকিৎসক মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিতে বলেন। মা ও শিশু হাসপাতালে শয্যা না থাকায় মেডিকেলে ভর্তি করেন। সেদিন রাজশ্রীর খিঁচুনির মতো হয়। এরপর রাতেই তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তখন থেকেই মেয়ে অজ্ঞান ছিল।
পরিবারের ধারণা, চট্টগ্রাম শহরেই রাজশ্রীকে এডিস মশার কামড়েছে। ঈদুল আজহার সময় নগরের লালদীঘির পাড় এলাকায় রাজীব পরিবারসহ এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। সেখানে বেশ কিছুদিন থাকার পর বাড়িতে ফিরে যান। বাড়িতে যাওয়ার পর জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথম জ্বর আসে রাজশ্রীর। পরে নাপা খাওয়ানোর পর তা চলে যায়। এরপর আবার জ্বর এলে শহরে নিয়ে আসেন। এর মধ্যে তার শরীরে র্যাশও দেখা দেয়।
রাজীব বলেন, ‘মেয়ের যে খারাপ অবস্থা হয়ে গেছে, বুঝিনি। খিঁচুনির মতো হওয়ার পর একবার বমি করে। রক্তও বের হয়। এরপর আইসিইউতেই সোমবার ভোরে মারা যায়।’
নগরের বলুয়ার দীঘি মহাশ্মশানে ছোট্ট রাজশ্রীকে সমাহিত করা হয় গতকাল সোমবার। মেয়েকে ছাড়া মা বীথি ধর এখন পাগলপ্রায়। কিছুক্ষণ পরপর কেঁদে ওঠেন। ভাই রাজবীরও কেমন যেন আনমনা হয়ে গেছে বোনের মৃত্যুতে।
চট্টগ্রামে এ বছর ২০ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। এর মধ্যে ১০ জনই শিশু। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১০১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৬৫ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ২৫ শতাংশের বেশি।