সংখ্যালঘুদের নির্যাতন বন্ধের দাবিতে রাজধানীতে মশালমিছিল, দাবি না মানলে লংমার্চ

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত মশালমিছিল করে সনাতন অধিকার মঞ্চ। ঢাকা, ৬ সেপ্টেম্বরছবি: দীপু মালাকার

বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বন্ধ ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে রাজধানীতে মশালমিছিল করেছে সনাতন অধিকার মঞ্চ। দাবি মানা না হলে আগামী ৫ অক্টোবর লংমার্চ করে ঢাকা অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছে তারা।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত মশালমিছিল করেন সনাতন অধিকার মঞ্চের নেতা–কর্মীরা। মিছিল থেকে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ কর, করতে হবে’, ‘আমার মন্দিরে হামলা কেন, জবাব চাই, জবাব চাই’, ‘আমার ভাইকে মারল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘দেশটা কারও বাপের না, এই দেশ ছাড়ব না’, ‘আমার মাটি আমার মা, এই দেশ ছাড়ব না’, ‘জাগো রে জাগো, হিন্দু জাগো’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিল শুরুর আগে জাতীয় সংগীতও পরিবেশন করা হয়।

মশালমিছিলের আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে সনাতন অধিকার মঞ্চ। সেখানে সমাবেশের সঞ্চালক ও বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুমন রায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, পূর্বঘোষিত ৮ দফা বাস্তবায়ন ও সনাতন সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার–নির্যাতন বন্ধ না হলে আগামী ৫ অক্টোবর সারা দেশ থেকে সনাতনী মানুষ ঢাকায় এসে রাজপথ অবরোধ করবে। ৫ অক্টোবর লংমার্চ করে পুরো ঢাকা শহর অবরোধ করা হবে।

সরকার পতনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বড় জমায়েত করেন। সেখান থেকে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। সরকারের উপদেষ্টারা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধ করা সহ বিভিন্ন দাবিতে মশালমিছিল করে সনাতন অধিকার মঞ্চ। ঢাকা, ৬ সেপ্টেম্বর
ছবি: দীপু মালাকার

আজকের সমাবেশে ভক্তসংঘ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অনিল পাল বলেন, সরকারের উপদেষ্টারা দাবি মানার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো একটি দাবিও পূরণ করা হয়নি। দেশের কোথাও হিন্দুরা শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না।

সনাতন সম্প্রদায়ের ৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাগুলোর বিচার ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের’ মাধ্যমে করা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন, দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি করা।

আজকের সমাবেশ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে জোর করে শিক্ষকদের পদত্যাগের প্রতিবাদও জানানো হয়। শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারী শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।

সমাবেশে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র সাজন কুমার মিশ্র বলেন, সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ হয় না। ছাত্র-জনতার আন্দোলন হলেও সনাতন সম্প্রদায় স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক অশোক তরু। তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। যেকোনো সমস্যা হলেই হিন্দুদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে। তিনি বলেন, এ কেমন স্বাধীনতা, যেখানে নির্বিচার শিক্ষকদের অসম্মান করা হয়?

এ সময় ভক্তসংঘের সভাপতি শান্তি রঞ্জন মণ্ডল, মোহন সরকার প্রমুখ বক্তব্য দেন।