এবারও ক্রেতাদের নজর অনলাইনে

করোনা শুরু হলে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি জনপ্রিয় হয়। সবচেয়ে বেশি বিক্রি ২০২১ সালে।

কোরবানির আগে অনেকের পক্ষেই হাটে গিয়ে পশু পছন্দ, দরদাম, কিনে বাসায় নিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই অনেকেই অনলাইনে পশুর খোঁজ করেন। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা আসকার ইবনে ফিরোজও এমন একজন। ঈদুল আজহার আগে হাটে গিয়ে পশু কেনা তাঁর পক্ষে কঠিন হওয়ায় বগুড়া ভান্ডার অ্যাগ্রো ফার্ম নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে দুটি গরু কিনেছেন।

এর একটির ওজন ১৯০ কেজি, দাম ৯৫ হাজার টাকা। আরেকটির ওজন ১৬০ কেজি, দাম ৮০ হাজার টাকা। আসকার ইতিমধ্যে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করেছেন। ২৬ জুন সন্ধ্যায় কোরবানির পশু দুটি বাসায় পৌঁছে দেবেন সেই খামারমালিক।

আসকার ইবনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার হাট থেকে পশু কেনার অভিজ্ঞতা আছে। তাতে প্রচুর ঝামেলা। সেসব ঝামেলা এড়াতে এবার প্রথমবারের মতো অনলাইনে পশু কিনেছি। আমার বাসায় একদম ঈদের আগে দিয়ে যাবে। আর আমি যে পেজ থেকে গরু কিনেছি, সেই পেজের মালিক আমার পূর্বপরিচিত, ফলে কোনো অনিশ্চয়তা নেই।’

এবার প্রধান প্রধান অনলাইনে বিক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই অনলাইনে পছন্দ হলেও বাস্তবে গরু দেখার ব্যবস্থা রেখেছেন। দেখার পর যদি পছন্দ না হয়, তাহলে চুক্তি বাতিল করতে পারবেন ক্রেতা।
মোহাম্মদ রেয়াজুল হক, পরিচালক (প্রশাসন), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর

বগুড়া ভান্ডার অ্যাগ্রো ফার্ম পেজের কর্ণধার তৌহিদ পারভেজ। বগুড়ার কাহালু উপজেলায় এই নামে তাঁর খামারটি রয়েছে। গত এক মাসে তিনি প্রায় দেড় শ পশু বিক্রি করেছেন। সাত–আটটি বাদে সব পশুই অনলাইনে বিক্রি করেছেন। তৌহিদ পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকেও (বৃহস্পতিবার) নোয়াখালীতে ২৪টি পশু পাঠিয়েছি। ঈদের আগে সবার বাসায় কোরবানির পশু পাঠিয়ে দেব।’

অনলাইনে কীভাবে ব্যবসা করেন, তা ব্যাখ্যা করে তৌহিদ পারভেজ বলেন, ‘ফেসবুক পেজে পশুর ১০ সেকেন্ডের ভিডিও প্রকাশ করা হয়। তার সঙ্গে পশুর জাত, উচ্চতা, ওজন, বয়সসহ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। কারও কোনো পশু পছন্দ হলে ফেসবুক পেজে থাকা নম্বরে ফোন করেন, কেউবা পেজের ইনবক্সে যোগাযোগ করেন। তারপর ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। কথা শেষে নিতে চাইলে ব্যাংকের তথ্য দিয়ে দিই, তাঁরা টাকা পাঠিয়ে দেন। তারপর আমি পশু পাঠিয়ে দিই।’

গরুই বেশি বিক্রি করেন তিনি। এ ছাড়া ছাগলসহ অন্যান্য গবাদিপশুও রয়েছে।

একই ধরনের কথা বলেন কেরানীগঞ্জ রাবিবা অ্যাগ্রোর মালিক এম এ মাকসুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনলাইনে সঠিক তথ্য দিতে হয়। সেসব দেখে ক্রেতারা ব্যাংকে টাকা দেন, আমরা গরু পাঠিয়ে দিই। অনলাইনে বেচলে ৯০ ভাগ ক্রেতার সঙ্গেই দেখা হয় না। আমরা গরু সংগ্রহও করি এভাবে।’ গত এক মাসে ৭০ থেকে ৭৫টি পশু বিক্রি করেছেন তিনি। তার মধ্যে অনলাইনে ৩০–৩৫টি, বাকিগুলো মানুষ এসে নিয়ে গেছেন বলেও জানান এম এ মাকসুদ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়াও ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও পশু কেনাবেচা হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঈদুল আজহা সামনে রেখে গতকাল পর্যন্ত ৬৪৬টি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ৫১ হাজার ২৯৮টি পশুর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৯ হাজার ৬৩টি পশু বিক্রি হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি পশুর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে—২৪ হাজার ২৭৩টি। তারপর ঢাকা বিভাগে—১২ হাজার ৯১৬টি। তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বেশি ঢাকায় ১৬২টি, তারপর চট্টগ্রামে ১৩৯টি, রাজশাহীতে ১১৩টি।

 প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর যে ৬৪৬টি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের তথ্য উল্লেখ করেছে, সব কটির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এর বাইরেও অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে, যা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনলাইনে স্বল্প পরিসরে বেশ আগে থেকেই কোরবানির পশু বিক্রি হতো। তবে করোনা শুরু হলে মানুষের মধ্যে অনলাইনে পশু বিক্রি জনপ্রিয়তা পায়। যার ধারাবাহিকতা এখনো বজায় রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস শুরু হলে ২০২০ সালে ঈদুল আজহায় অনলাইনে পশু বিক্রি বাড়ে। ২০২১ সালের ঈদে ৯১ লাখ পশু বিক্রি হয়। তার মধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্মের আওতায় ২ হাজার ৭৩৫ কোটি ১১ লাখ টাকা মূল্যের ৩ লাখ ৮৭ হাজার পশু বিক্রি হয়। তার পরের বছর অনলাইনে বিক্রি কমে যায়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ রেয়াজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের তুলনায় এবার অনলাইনের সংখ্যা বাড়ার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে অনলাইন সুসংগঠিত হচ্ছে। আগে যেসব ত্রুটিবিচ্যুতি ছিল, সেসব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। যেমন একটি পশু ছবিতে এক রকম লাগে, বাস্তবে আরেক রকম। এবার প্রধান প্রধান অনলাইনে বিক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই অনলাইনে পছন্দ হলেও বাস্তবে গরু দেখার ব্যবস্থা রেখেছেন। দেখার পর যদি পছন্দ না হয়, তাহলে চুক্তি বাতিল করতে পারবেন ক্রেতা। এতে ভোক্তার আরেকটু স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা তৈরি হয়েছে।’