বিজয় মিছিল থেকে ফেরার পথে খুন, বিএনপি নেতাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক শফিউল আলমকে হত্যার অভিযোগে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহকে প্রধান আসামি করে ২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় নিহত শফিউল আলমের বাবা কামাল পাশা বাদী হয়ে মহেশখালী থানায় এই মামলা করেন। মামলায় যুবদল নেতা জাহেদুল হক ও হাবিব উল্লাহকেও আসামি করা হয়। যুবদল নেতা জাহেদুল সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীরের ভাতিজা।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, গতকাল রাতে নিহত শফিউল আলমের বাবা কামাল পাশা বাদী হয়ে ২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহকে। ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে তাঁর ভাতিজা জাহেদুল হককে।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিজয় মিছিল শেষে রাত ১১টার দিকে বিএনপি নেতা শফিউল আলম উপজেলা সদরের গোরকঘাটা বাজার থেকে মোটরসাইকেলে বড় মহেশখালী ইউনিয়নে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। এর মধ্যে বানিয়ার দোকানের সামনে পৌঁছালে সড়কে আগে থেকে ওত পেতে থাকা স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায়। সেখানে সন্ত্রাসীরা তাঁকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে এলাকাবাসী তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক সেখান থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। পরে মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, মহেশখালীতে বিএনপির দুটি পক্ষ আছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক। আরেকটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ। শফিউল আলম আবু বকর সিদ্দিকের অনুসারী ছিলেন।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপি নানা কর্মসূচি পালন করে। ওই দিন সরকার পতনের কর্মসূচিতে স্লোগান দিয়েছিলেন উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক শফিউল আলম। দলীয় কর্মসূচি শেষ করে রাতে বাড়ি ফেরার পথে সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহর নির্দেশে তাঁর ভাতিজাসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী শফিউল আলমের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেলে মারা যান তিনি।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন আলমগীর। তাঁর ভাতিজা আশেক উল্লাহ রফিক আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। বিএনপির কোনো কমিটিতে আলমগীরের নাম নেই বলে দাবি করেন তিনি।
হামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহর ভাতিজা জাহেদুল হক বলেন, এ ঘটনায় তাঁদের কেউ জড়িত নয়। এরপরও রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য প্রতিপক্ষের ওই মামলায় তাঁদের আসামি করেছেন।
জানতে চাইলে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।