গাড়িবুক: বাংলাদেশের ইন্টারসিটি ভ্রমণে স্বাধীনতার নতুন পথচলা
বাংলাদেশে ইন্টারসিটি ভ্রমণ সহজ ও সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে একটি অনন্য উদ্যোগ নিয়ে এসেছে ‘গাড়িবুক’। কোনো কমিশন ছাড়াই ইন্টারসিটি কার রেন্টাল পরিষেবা দেওয়া গাড়িবুক দেশের প্রথম এবং একমাত্র অ্যাপ। এটি শুধু যাত্রীদের জন্য সুবিধাই আনেনি, বরং চালকদের জন্য আয়ের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
আমাদের দেশের ব্যক্তিগত পর্যায়ে গাড়িভাড়া খাত দীর্ঘদিন ধরে মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা প্রভাবিত। যাত্রীরা একদিকে উচ্চ ভাড়া দিতে বাধ্য হন, অন্যদিকে চালকেরা তাঁদের আয়ের বড় অংশ হারান। এই সমস্যার সমাধানে গাড়িবুক সরাসরি চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের সংযুক্ত করে একটি স্বচ্ছ এবং ন্যায্য ভাড়ায় চলাচলের ব্যবস্থা তৈরি করেছে।
গাড়িবুক-এর যাত্রা শুরু ২০২১ সালে, মূলত প্রবাসী রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের এয়ারপোর্ট পিক এবং ড্রপসেবা প্রদানের মাধ্যমে। তাঁদের ভ্রমণকে আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ করতে গাড়িবুক একটি নির্ভরযোগ্য সেবা হিসেবে গড়ে ওঠে। ২০২৪-এর জানুয়ারি মাসে গাড়িবুক অ্যাপভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশজুড়ে ইন্টারসিটি কার রেন্টাল সার্ভিস নিয়ে আসে।
বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান এবং এর কারণ বিশ্লেষণ করলে গাড়িবুক-এর সেবার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়, যার ৯০ শতাংশর পেছনে চালকদের ভূমিকা রয়েছে। দক্ষ চালকের অভাব, বিরতিহীন ট্রিপ এবং অযোগ্য লাইসেন্স প্রক্রিয়া এই সমস্যাগুলোর মূল কারণ। গাড়িবুক-এ ড্রাইভারদের লাইসেন্স, গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ভেরিফাই করে অনবোর্ড করা হয়। ড্রাইভারদের ন্যায্য আয় নিশ্চিত করায় ড্রাইভাররা তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী ট্রিপ ও ভাড়া নিতে পারেন। এতে তাঁরা যথেষ্ট বিশ্রামের সময়ও পান, যা ড্রাইভারদের মানসিক ও শারীরিক স্থিতি বজায় থাকে এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ছিল অস্পষ্টতা, দরদাম নিয়ে ঝামেলা এবং অতিরিক্ত কমিশনের বোঝা। কিন্তু গাড়িবুক এসে ভ্রমণ খাতে এনেছে এক নতুন দিগন্ত। চালকদের আয়ের ওপর কোনো কমিশন না নিয়ে, গাড়িবুক তাদের পূর্ণ আয় নিশ্চিত করছে। ফলে চালকেরা যেমন আরও আর্থিক স্থিতিশীলতা পাচ্ছেন, তেমনি যাত্রীদের জন্যও ভাড়া হচ্ছে তুলনামূলকভাবে কম। শুধু তা-ই নয়, যাত্রীরা নিজের পছন্দ অনুযায়ী গাড়ি, ড্রাইভার এবং ভাড়া বেছে নিতে পারছেন, যা ভ্রমণকে করে তুলছে একদম ঝামেলামুক্ত।
বিশেষ করে কক্সবাজার, শ্রীমঙ্গল, রাঙামাটি ও বান্দরবানের মতো পর্যটন এলাকায় ‘চান্দের গাড়ি’ যুক্ত করার মাধ্যমে গাড়িবুক ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এনেছে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। এখন আর দরদাম নিয়ে ঝামেলা নয়, যাত্রীরা ঘরে বসেই অ্যাপ থেকে চান্দের গাড়ি বুক করতে পারেন।
গাড়িবুকের এই সফলতার গল্প এখানেই থেমে নেই। ১ বছরের কম সময়ে ২.৫ লাখের বেশি গ্রাহক এবং ২৫ হাজারের বেশি চালক নিয়ে গাড়িবুক আজ সারা বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। তাদের বহরে রয়েছে সেডান, নোহা, হাইয়েস, কোস্টার থেকে শুরু করে বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ এবং হ্যারিয়ারের মতো গাড়ি। পারিবারিক ভ্রমণ, বড় গ্রুপের যাত্রা বা বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য আপনার প্রয়োজনের সবকিছুই গাড়িবুকে সহজে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া গাড়িবুক বি-টু-বি (বিজনেস টু বিজনেস) সেক্টরেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
কার রেন্টাল খাতে গাড়িবুক একটি অনন্য উদাহরণ তৈরি করছে। ডেইলি কমিউটারদের জন্য গাড়িবুক নিয়ে আসছে রাইড শেয়ার সার্ভিস। এ ছাড়া আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং যাত্রীদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত পরিষেবা চালু করার মাধ্যমে গাড়িবুক ভ্রমণকে আরও উন্নত এবং আকর্ষণীয় করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গাড়িবুক শুধু একটি অ্যাপ নয়, এটি ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক নতুন যুগের দরজা খুলে দিয়েছে। সহজ বুকিং, সাশ্রয়ী ভাড়া এবং চালকদের জন্য কমিশন ফ্রি নীতি—সব মিলিয়ে গাড়িবুক এক দারুণ উদ্ভাবন।
গাড়িবুক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://t.ly/GExTH