অনুবাদের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রকাশনার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করেন। বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১ জানুয়ারিছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বৈশ্বিক মঞ্চে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের পাশাপাশি মুদ্রিত বইগুলোর ডিজিটাল প্রকাশের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সকল প্রকাশককে মুদ্রণ প্রকাশনার পাশাপাশি ডিজিটাল প্রকাশক হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। যাতে আমরা বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে শুধু দেশের ভেতরে নয়, বিশ্ব মঞ্চেও দ্রুত পৌঁছে দিতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীতে বাংলা একাডেমিতে রেকর্ড ২১তম বারের মতো মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৪’-এর উদ্বোধন করেন। সেখানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা উচিত। তিনি বলেন, ‘প্রকাশকদের অনুরোধ করব এখন প্রকাশকদের শুধু কাগজের প্রকাশক হলেই হবে না, ডিজিটাল প্রকাশক হতে হবে। কাজেই ডিজিটাল প্রকাশক হলে এটা দ্রুত শুধু আমরা আমাদের দেশে না, বিদেশেও সকলের কাছে পৌঁছাতে পারব এবং অন্য ভাষাভাষীরাও পড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘লাইব্রেরিগুলোতে পড়ার জন্য থাকবে আবার অডিও ভার্সনটাও যেন থাকে। এটারও প্রয়োজন আছে। সেটা থাকলে অনেকের সুবিধা, শোনার মাধ্যমে জানতে পারবে। সেই ব্যবস্থাটাও আমাদের নেওয়া উচিত।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্য অতিথিদের সঙ্গে এবারের বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্তরা। ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি
ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী অনুবাদ সাহিত্যের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘অনুবাদ সাহিত্যে আমি বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই। একসময় অনেকে দাবি তুলেছিলেন অনুবাদ করা যাবে না, কিন্তু আমি অনুবাদের পক্ষে। অনুবাদ যদি না হয়, তাহলে এত ভাষা আমরা কোথা থেকে জানব। কাজেই যেকোনো ভাষাকে অনুবাদ করে; এক একটা দেশকে জানতে হলে, জাতিকে জানতে হলে, সংস্কৃতিকে জানতে হলে আমরা ভাষার মধ্য দিয়ে জানতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বাংলা সাহিত্য যত বেশি অনুবাদ হবে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভাষাভাষীরা পড়ার সুযোগ পাবে। আমি আরেকটা কথা বলব, বাংলা একাডেমি একটি আলাদা ওয়েব পোর্টাল তৈরি করে যত প্রকাশনা হয় সেগুলো ডিজিটালাইজড করে সেটা প্রচার করা এবং অন্যান্য ভাষার যাতে অনুবাদ হয়, সে ব্যবস্থাটা করতে পারলে আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আরও দ্রুত বিশ্বব্যাপী এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। সে ব্যবস্থাটা আমাদের করা দরকার।’

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগৃহীত রচনা: দ্বিতীয় খণ্ড’ এবং ‘প্রাণের মেলায় শেখ হাসিনা’ (বাংলা একাডেমিতে শেখ হাসিনার গত ২০ বারের ভাষণের সংকলন) শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলা উদ্বোধনের পর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি
ছবি: পিআইডি

এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ১৬ জনকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করেন। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এ বছর ১১টি বিভাগে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন: শামীম আজাদ (কবিতা), ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী (কথা সাহিত্য), জুলফিকার মতিন (প্রবন্ধ/গবেষণা), সালেহা চৌধুরী (অনুবাদ), নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক (যৌথভাবে নাটক ও নাট্য সাহিত্য), তপঙ্কর চক্রবর্তী (শিশুসাহিত্য), আফরোজা পারভিন এবং আসাদুজ্জামান আসাদ (মুক্তিযুদ্ধের ওপর গবেষণা), সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এবং মো. মজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা), পক্ষীবিদ ইনাম আল হক (পরিবেশ/বিজ্ঞান ক্ষেত্র), ইসহাক খান (জীবনী) এবং তপন বাগচী ও সুমন কুমার দাস (যৌথভাবে লোককাহিনি)।

বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত এবং অমর একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ পরিবেশিত হয়। এরপর ভাষাশহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বইমেলা ঘুরে দেখেন।