বিকেল সাড়ে চারটা। বিকট শব্দে কেঁপে উঠল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকা। এ শব্দ ওই এলাকার ‘সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড’ নামের একটি কারখানায় বিস্ফোরণের। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত অন্তত ১৯ জন। তাঁদের অনেককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে তাঁদের আর্তনাদ ও স্বজনদের আহাজারিতে।
বিস্ফোরণের খবর পেয়ে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় হতাহতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। বিস্ফোরণের পর কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে, এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তাঁরা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে কাজ করছেন। পুলিশও উদ্ধারকাজে অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ।
উদ্ধারকাজে নেমেছেন স্থানীয় মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরাও। এমনই একজন ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিস্ফোরণের পর তিনি আহত চারজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন।
বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল দেখতে আসেন রিদওয়ানুল হক নামের মাদামবিবির হাটের এক বাসিন্দা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের পর কদমরসুল এলাকায় ঘন কালো ধোঁয়া ওপরের দিকে উঠতে দেখেন। ধোঁয়া অনুসরণ করে কারখানা এলাকায় গিয়ে দেখেন বীভৎস অবস্থা। একের পর এক আহত শ্রমিকদের বের করে আনা হচ্ছে। তিনি অন্তত ১২ জন শ্রমিককে বের করে নিয়ে যেতে দেখেছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে অন্তত ১৯ আহত ব্যক্তিকে আনা হয়েছে। আর লাশ আনা হয়েছে দুটি। সরেজমিন হাসপাতালে দিয়ে দেখা যায়, সাইরেন বাজিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ঢুকছে হাসপাতালে। আহত যাঁরা নামছেন, তাঁদের কারও পা থেঁতলে গেছে, কারও মাথায় আঘাত আছে, কারও চোখে গুরুতর জখম হয়েছে। হতাহতদের স্বজনেরা আহাজারি করছেন।
সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছিল। অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে পৌনে এক কিলোমিটার দূরে ওই ডিপোতে গত বছরের ৪ জুন রাতে বিস্ফোরণে অন্তত ৫০ জন নিহত ও ২ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিলেন। সে সময় একের পর এক লাশ জমা পড়েছিল হাসপাতালের মর্গে। স্বজনদের আহাজারিতে কেঁপে উঠেছিল চারপাশ।