১০ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর আলাদা জীবন পেল জোড়া লাগানো শিশু শিফা-রিফা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে আলাদা করা যমজ দুই শিশু বাবা–মায়ের কোলেছবি: সংগৃহীত

জোড়া লাগানো যমজ শিশু শিফা-রিফাকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সফলভাবে পৃথক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ৭ সেপ্টেম্বর সকালে শুরু হওয়া অস্ত্রোপচার চলে ১০ ঘণ্টাব্যাপী। এই অস্ত্রোপচারে ৮২ জন চিকিৎসক অংশ নেন।

সফল অস্ত্রোপচারের বিষয়টি জানাতে আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনফারেন্স কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শিরোনাম ছিল ‘শিফা-রিফা থেকে শিফা ও রিফা পৃথক্‌করণ সফলতার পরবর্তী অনুষ্ঠান সংবাদ সম্মেলন’।

অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেওয়া চিকিৎসক শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক সাহানুর ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যমজ শিশুর জন্মগত ত্রুটি ছিল। এসব রোগীর ক্ষেত্রে কখনো দুজনের কাউকে রক্ষা করা যায় না, আবার কখনো একজনকে বাঁচানো সম্ভব হয়। এই দুই শিশুর মধ্যে শিফার জন্মগত হৃদ্‌রোগসহ আরও কয়েকটি সমস্যা ছিল। এরপরও অস্ত্রোপচার–পরবর্তী ফলাফল ভালো ছিল। এত সব সমস্যার মধ্যেও সফলভাবে শিশু দুটিকে পৃথক করা গেছে। সবার সমন্বয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি সফল হয়েছে। তিনি দেশবাসীর কাছে শিশু দুটির জন্য দোয়া চান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার পোশাককর্মী বাদশা মিয়ার স্ত্রী মাহমুদা বেগম থাকেন মিরপুর এলাকায়। ২০২৩ সালের ৭ জুন স্থানীয় হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাহমুদার জোড়া লাগানো যমজ শিশুর জন্ম হয়। ওই বছরের ১৪ জুন যমজ শিশু শিফা-রিফাকে শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহানুর ইসলামের কাছে নিয়ে আসেন অভিভাবকেরা। পরে ২১ জুন তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের চিকিৎসার জন্য বোর্ড গঠন করা হয়। ওই বোর্ডের তত্ত্বাবধানে শিফা-রিফার চিকিৎসা চলতে থাকে। জন্মগতভাবে দুই শিশুর মাথা, দুই হাত, দুই পা, মলদ্বার, প্রস্রাবের রাস্তা আলাদা। তবে বুক ও পেট জোড়া লাগানো অবস্থা রয়েছে। পরীক্ষার পর দেখা যায়, দুজনের হৃৎপিণ্ডের পর্দা, সাধারণ যকৃৎ নালি, পোর্টাল শিরা, ক্ষুদ্রান্ত্রের কিছু অংশ একে অন্যের সঙ্গে জোড়া লাগানো। দুজনের মধ্যে একজন অপেক্ষাকৃত কম খেলেও ওজন বেশি ছিল। এরপর দীর্ঘদিন ওই চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছিল এই যমজ শিশুরা।

৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ১০ ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচার করে তাদের আলাদা করা হয়। অস্ত্রোপচার শেষে তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর রিফাকে ভেন্টিলেটর থেকে মুক্ত করা হয়। পরদিন শিফাকে ভেন্টিলেটরমুক্ত করা হয়। এর দুদিন পর ১১ সেপ্টেম্বর শিফার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়। পরে তাকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান শিশু কার্ডিয়াক সার্জন অধ্যাপক আরিফুজ্জামানের অধীনে সেখানে নিয়ে রাখা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর শিফাকে আবারও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।

যমজ শিশুর বাবা বাদশা মিয়া বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। আমার পক্ষে এ চিকিৎসা করানো সম্ভব ছিল না। চিকিৎসক স্যারেরা আমার শিশুদের জন্য যা যা প্রয়োজন সবই করেছেন। তাঁরা অনেক কষ্ট করেছেন। আমার সন্তানদের চিকিৎসার জন্য সব খরচও দিয়েছেন তাঁরা। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। শিফা ও রিফার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল আলম, বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।