শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা এবং তাঁকে আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ আজ বুধবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানান। তাঁরা অবিলম্বে শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ইতিমধ্যেই সাংবাদিকতাসহ বাক্স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধিচর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সাংবাদিক, আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের কাছ থেকেও আইনটির পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিয়োজন ও সংযোজনের বিষয়ে নানা ধরনের পরামর্শ, সুপারিশ ও উদ্বেগ প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে।
আইনটি তৈরির সময় থেকেই সম্পাদক পরিষদ এবং সাংবাদিকেরা এ আইনের বিষয়ে উদ্বেগ ও আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। আইনমন্ত্রী এ আইনের বিভিন্ন ধরনের অপব্যবহার এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে আইনটি সংশোধনের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও এ আইনের মাধ্যমে সংবাদকর্মী ও মুক্তমত প্রকাশকারী ব্যক্তিরা ক্রমাগতভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
সম্পাদক পরিষদ বলেছে, কোনো সংবাদে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তিনি প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ ও মামলা করতে পারেন। কিন্তু সেটি না করে সরাসরি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হচ্ছে।
সে কারণে সাংবাদিকতার স্বাধীন ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দ্রুত সংশোধনসহ সাংবাদিক শামসুজ্জামানসহ সব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি করছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে এ আইনে কেউ গ্রেপ্তার বা আটক থাকলে অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করেছে সংগঠনটি।
গত রোববার প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে প্রকাশের সময় দিনমজুর জাকির হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘কার্ড’ তৈরি করা হয়। সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ভুল করে ছবি দেওয়া হয় একটি শিশুর। পোস্ট দেওয়ার ১৭ মিনিটের মাথায় অসংগতিটি নজরে আসে এবং দ্রুত তা প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি প্রতিবেদন সংশোধন করে সংশোধনীর বিষয়টি উল্লেখসহ পরে আবার অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি যে উক্তিটি ওই শিশুর। বরং স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, উক্তিটি দিনমজুর জাকির হোসেনের।
প্রতিবেদনটি করেছিলেন শামসুজ্জামান। তাঁকে আজ বুধবার ভোর চারটার দিকে তাঁর সাভারের বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে কয়েকজন তুলে নেন। তাঁর নামে ঢাকার তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেছেন সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া (৩৬) নামের এক ব্যক্তি। মামলার এজাহারে গোলাম কিবরিয়ার পরিচয়ে লেখা হয়েছে, তিনি ঢাকার কল্যাণপুরের বাসিন্দা। তাঁর ফেসবুক পেজে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি যুবলীগের ঢাকা মহনগর উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। তিনি আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।