সমতার লড়াইয়ের চেতনা নিয়ে শুরু হলো উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেনের ঘনিষ্ঠ সহচর, প্রবীণ কৃষকনেতা লীনা চক্রবর্তী। গতকাল বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

শুরু হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন। এবারের জাতীয় সম্মেলনের স্লোগান, ‘আমরা তো লড়ছি সমতার মন্ত্রে, থামব না কখনোই শত ষড়যন্ত্রে।’ বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তিন দিনের সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেনের ঘনিষ্ঠ সহচর প্রবীণ কৃষক নেতা লীনা চক্রবর্তী। শুরুতে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন লীনা চক্রবর্তী। সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শুরু হয় সারা দেশ থেকে আসা উদীচীর হাজারো শিল্পী-কর্মীর শোভাযাত্রা। তাঁরা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ফিরে আসেন।

এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। স্বাগত বক্তব্যে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে, ছাত্র–জনতাই বারবার বাংলায় মুক্তি এনেছে। কিন্তু প্রতিবারই অল্পতে এ দেশের মানুষের স্বপ্ন চুরি হয়ে যায়। এবারও তাই ঘটছে। যে আন্দোলনে সবাই একত্র হয়েছিল, সেই এক হওয়ার জায়গায় আঘাত হানা হয়েছে। দেশের ঐতিহ্য, ভাস্কর্য, সংগীতে আঘাত হানা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে যত বাধাই আসুক, উদীচীর কণ্ঠস্বর শোনা যাবে বলে উল্লেখ করেন অমিত রঞ্জন দে।  

লীনা চক্রবর্তী বলেন, ‘সবকিছুর দাম মেটাতে হয়। সত্যেন সেন উদীচী করতে গিয়ে সে দাম মিটিয়েছিলেন শত যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়ে। অথচ কোনো দিন কাউকে অভিযোগ করেননি। তিনি সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিয়েছিলেন।’ এ সময় একবার জেলখানা থেকে বের হওয়ার পরপর সত্যেন সেনের সংবর্ধনা ও প্রেসক্লাবে সন্‌জীদা খাতুন আর ওয়াহিদুল হকের একসঙ্গে গান গাওয়ার স্মৃতিচারণা করেন লীনা চক্রবর্তী।

রাফিউর রাব্বি বলেন, ‘এত রক্তপাতের পরও আমরা জানি না কীভাবে সুফল আসবে।’ এ দেশের সাধারণ মানুষকে নিয়ে সব সময়ই শুধু রাজনীতি হয়ে আসছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। রফিউর রাব্বি তাঁর বক্তব্যে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য চরিত্রগতভাবে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে মিল কোথায়, সেসব উদাহরণ দেন। আলোচনা পর্বের সমাপনী বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। তিনি বলেন, এখন সময়টা অন্য রকম। প্রতিবার উদীচীর সম্মেলনে এখানে অনেক রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠান হয়। এবার সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এ দেশের ইতিহাস শুধু গত ১৫ বছরের নয়। ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছরে দুবার সামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের ইতিহাস ৫৪ বছরের। এই আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।

এরপর গীতি-নাট্যালেখ্য ‘প্রতারিত চিরকাল’ দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে শুরু হবে সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন। সন্ধ্যায় হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শনিবার সম্মেলনের সমাপনী দিনের কার্যক্রম। সেদিন পরবর্তী দুই বছরের জন্য নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন।

১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠার পর থেকে সৃজনশীল মাধ্যমে সমাজের নানা অসংগতি, শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছে উদীচী। প্রতি দুই বছর পরপর জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করে উদীচী।