ডুবে থাকা জাহাজ-ড্রেজার উদ্ধারে সচিবদের দ্বারস্থ নারায়ণগঞ্জের ডিসি
শীতলক্ষ্যা নদীতে দীর্ঘদিন ধরে ডুবে থাকা জাহাজ ও ড্রেজার সরিয়ে নিতে এবার দুই সচিবের দ্বারস্থ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এর আগে নৌযানগুলো সরাতে কয়েক দফায় সংশ্লিষ্ট দুটি দপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাতে কাজ হয়নি। এবার সচিবদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকায় ড্রেজার ও জাহাজগুলোয় মরিচা ধরে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রাংশ। চুরি হয়ে যাচ্ছে মালামাল। এ ছাড়া এভাবে জাহাজ পড়ে থাকায় সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ শীতলক্ষ্যা নদী। পলি জমে নদী নাব্য হারাচ্ছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।
যে দুই সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন পানিসম্পদসচিব নাজমুল আহসান ও নৌপরিবহনসচিব মোস্তফা কামাল। তাঁদের চিঠি দেওয়ার কারণ, ড্রেজারগুলো পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। আর জাহাজ ও নৌযানগুলো নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) মালিকানায়।
ডুবে থাকা অকেজো জাহাজ-ড্রেজার জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নিতে ১১ অক্টোবর দুই সচিবকে ওই চিঠি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহমুদুল হক। চিঠিতে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জে নদীর মোহনা, আদমজী ও নদীবন্দর এলাকায় অকেজো হয়ে জাহাজ পড়ে আছে। জাহাজ ও ড্রেজার ডুবে থাকায় পলি জমে নদী নাব্য হারাচ্ছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।
অকেজো নৌযান বিক্রি করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সরকারি কাজ, এ জন্য কিছুটা সময় লাগছে। তবে বিক্রি হয়ে যাবে।
চিঠিতে নারায়ণগঞ্জের ডিসি উল্লেখ করেন, গত ২৯ জুলাই তিনি নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী গিয়ে ডুবে থাকা নৌযান দেখতে পান। পরে ১৩ আগস্ট জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাতে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপর দুই সচিবকে চিঠি দেওয়া হলো।
অবশ্য বিআইডব্লিউটিসি বলছে, নদী থেকে নৌযান সরাতে নিলাম ডাকা হয়। তবে তেমন সাড়া পাওয়া যায় না। ব্যবসায়ীরা পরিত্যক্ত ড্রেজার ও জাহাজ সরকার নির্ধারিত দামে কিনতে আগ্রহী হচ্ছে না। এ জন্য সময় লাগে।
ড্রেজার-নৌযান বিক্রির চেষ্টা নেই
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সূত্র জানিয়েছে, শীতলক্ষ্যা ব্যস্ততম ‘এ’ শ্রেণির একটি নদী। প্রতিদিন এ নদী দিয়ে মালবাহী কার্গো, তেলের ট্যাংকারের পাশাপাশি যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল করছে। নদীতে ডুবে থাকা জাহাজ ও ড্রেজারের কারণে নদী সংকুচিত হয়ে গেছে। এতে অন্য নৌযানের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ডুবে থাকা নৌযানের সঙ্গে ধাক্কায় দুর্ঘটনাও ঘটেছে।
বিআইডব্লিউটিএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে ২৫টির মতো ড্রেজার ও জাহাজ আংশিক বা পুরো ডুবে আছে। তবে স্থানীয় সূত্রমতে, এ সংখ্যা শতাধিক। বছরের পর বছর এসব জাহাজ ডুবে আছে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পাড়ে জ্বালানি তেল বহনকারী অকেজো তিনটি ট্যাংকার পাশাপাশি নদীর এক-তৃতীয়াংশ জায়গাজুড়ে নোঙর করে রাখা হয়েছে। ট্যাংকারগুলোর ইঞ্জিন ও বডি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেগুলো বাংলোঘাটে তীরে এনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া টাগবোটসহ আরও চারটি জাহাজ পড়ে আছে বিআইডব্লিউটিসির। ডুবে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি জাহাজ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কোনো দুর্ঘটনায় এসব জাহাজ ও ড্রেজার নদীতে নিমজ্জিত হয়নি। বিভিন্ন সময়ে ড্রেজিংয়ের কাজ করতে গিয়ে ড্রেজার আর সরানো হয়নি। নৌযানগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নৌযানগুলো ডুবে থাকায় নদীতে পলি জমে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। রাতের বেলায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকছে। নৌযানগুলো জরুরি ভিত্তিতে সরানো উচিত।
বিআইডব্লিউটিএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে ২৫টির মতো ড্রেজার ও জাহাজ আংশিক বা পুরো ডুবে আছে। তবে স্থানীয় সূত্রমতে, এ সংখ্যা শতাধিক। বছরের পর বছর এসব জাহাজ ডুবে আছে।
‘দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে’
নৌ চলাচল অধ্যাদেশ ১৯৭৬ অনুযায়ী ৫৭ (ক) ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি মাছ ধরার জাল পেতে বা অন্য কোনো উপায়ে নাব্য নৌপথে কোনো অভ্যন্তরীণ নৌযানের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারবে না। এ ধারা ভঙ্গকারী ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে। এ ক্ষেত্রে আদালত নৌ চলাচলে বাধার সৃষ্টিকারী বস্তু বাজেয়াপ্ত করতে সরকারকে নির্দেশ দিতে পারেন।
অভিযোগ আছে, ড্রেজার ও নৌযান বিক্রির চেষ্টা নেই সংশ্লিষ্টদের। বিআইডব্লিউটিসি ও পাউবোর গাফিলতির কারণে নদী থেকে নৌযান অপসারণে দেরি হচ্ছে। এতে নদীর গতিপথও পরিবর্তন হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক এস এম আশিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অকেজো নৌযান বিক্রি করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সরকারি কাজ, এ জন্য কিছুটা সময় লাগছে। তবে বিক্রি হয়ে যাবে। তিনি জানান, এর আগে একবার দরপত্র আহ্বান করে নৌযান বিক্রি করা হয়েছে।