অন্যায়-অত্যাচার মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি পাল্টানোর জন্যই জুলাই বিপ্লব হয়েছিল। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে অন্যায়-অত্যাচার মেনে না নিয়ে লড়াই-প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। অভিনেতা ও নাট্য নির্দেশক দীপক সুমন ও তাঁর পরিবারের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করেন শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও নাগরিকেরা।
সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বক্তারা বলেন, সরকার যে কয়দিনের জন্যই ক্ষমতায় থাকুক, মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে। দীপক সুমন ও তাঁর পরিবারের মতো আরও যাঁদের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে, সব দুষ্কৃতকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দীপক সুমন নিজেই। হামলার দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক দফায় লোকজন এসে তাঁর বাড়ির সামনের পার্কিং টাইলস বসানোর কাজে বাধা দেন এবং সেগুলো এদিক-ওদিক সরাতে বলেন। বিকেলে বিএনপির স্থানীয় সংরক্ষিত কাউন্সিলর সেখানে আবার এক দফা ভাঙচুর করে কাজ করান। পরে রাত ১০টার দিকে আবার বিএনপির ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়ে আরেক দফা ভাঙচুর করতে বলেন।
দীপক সুমন বলেন, ‘ওই বিএনপি কাউন্সিলরের ভাষ্য অনুযায়ী আমি বেয়াদবি করেছি। অথচ সেদিন শুধু বলেছিলাম, “নাগরিক হিসেবে আপনার আর আমার অধিকার সমান।” তিনি বললেন, “তুমি খুব বেয়াদব হয়ে গেছ। তুমি আমি সমান?” আমি বললাম, “আমার আপনার নাগরিক অধিকার সমান।” একজন জনপ্রতিনিধি অন্তত দেশের সব মানুষের নাগরিক অধিকার যে সমান, সেটা বুঝবে এটাই চেয়েছিলাম।’
পরে ওই কাউন্সিলর আক্রমণাত্মক হয়ে সব টাইলস তুলে ফেলতে বলেন জানিয়ে দীপক সুমন বলেন, ‘ভিডিও করতে গেলে কাউন্সিলর বলেন, সংখ্যালঘু হিসেবে প্রচারের জন্য ভিডিও করছে। মোবাইল কেড়ে নেয়। মোবাইল চাইলে একজন থেকে আরেকজনের কাছে দিয়ে হাতবদল করে খেলা খেলতে থাকে। একপর্যায়ে আমি রাস্তায় পড়ে যাই। মা এগিয়ে গেলে তাঁকে ধাক্কা দেয়। তখন আমি হাত জোড় করে অনুরোধ করে মাফ চাই।’
দীপক সুমন আরও বলেন, ‘গত ২৫ বছরে শাহবাগ-টিএসসি পর্যন্ত অনেকবার দাঁড়িয়েছি। নিজের ও পরিবারের ওপর হামলার জন্য দাঁড়াতে হবে প্রতিবাদ জানাতে হবে, এটা কল্পনায় ছিল না।’
সমাবেশে গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের অন্যতম সংগঠক কামাল হোসেন বলেন, দীপক সুমনের ওপর আক্রমণ গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর, সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর আক্রমণ। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিস্ট মানসিকতা এখনো আছে। লুটপাট, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম এখনো চলছে। এগুলো বন্ধ করে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব এই সরকারের।
এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নারী নেত্রী তাহেরা বেগম জলি বলেন, ‘হয়তো বড্ড আশা করে ফেলেছি। হাসিনা সরকারের মতো ভয়ংকর সরকারের পতনের পর আশা করেছিলাম হয়তো উল্টোটা হবে। হাসিনা যেখানে নরকের আগুনে নিক্ষেপ করছিল, বর্তমান সরকার হয়তো দুধের সাগরে ভাসিয়ে দেবে। এটা অত্যন্ত অলীক চিন্তা। তাই আশা থেকে দূরে এসে দাঁড়াতে হবে। যতখানি প্রতিরোধ গড়তে পারব, ততখানি স্বাধীনতা ভোগ করতে পারব।’
প্রতিবাদী সমাবেশ সঞ্চালনা করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি জামশেদ আনোয়ার। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক আমিরুন নূজহাত মনীষা, মুক্তির মঞ্চের নেতা হেমন্ত দাস, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান, মাওলানা ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক রঘু অভিজিৎ রায়, সংগীতশিল্পী সায়ান, বিবর্তনের মফিজুর রহমান এবং অধিকারকর্মী ও লেখক বাকি বিল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।