ঢাকা অচল হতে পারে, এই ভয় করছে সরকার: মান্না

‘কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন: সংকট উত্তরণে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। জাতীয় প্রেসক্লাব, ২৫ জুলাই
ছবি: ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

রাজধানী ঢাকাকে অচল করতে দেওয়া হবে না—ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এমন মনোভাব প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘ঢাকা যে অচল হয়ে যেতে পারে, এই ভয় করছে সরকারই।’

বিরোধী দলের সভা–সমাবেশের আগে সরকার নিজেরাই বাস বন্ধ করে দিয়ে ঢাকা অচল করে দেয় বলেও মন্তব্য করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না।

আজ মঙ্গলবার দুপুর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। ‘কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন: সংকট উত্তরণে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।

আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, দেশে একটা কিছু হচ্ছে। এমন কিছু, যা পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে। এটা অনুভব করছেন তিনি।

দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে আওয়ামী লীগ ৭০ শতাংশ ভোট পেলে আপত্তি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু তারা তা করবে না। তারা জানে, তাদের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে।’

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের বৈঠক প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে যাতে শেখ হাসিনা জেতেন, ওই বৈঠকে এমনটা বলা হয়েছে। এই আমলাতন্ত্র বদলাতে হবে। জান বাজি রেখে আগামী ২৭ তারিখে মাঠে নামছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারকে বিদায় নিতে হবে।’

আলোচনা সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘জনগণ বলে সরকার বদল হয়, আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। ক্ষমতার জন্য সরকার বদল আমরা চাই না।’ আমাদের মধ্যে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে নির্বাচন করলে জনগণের কাঠগড়ায় তাঁদের বিচার হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

আ স ম আবদুর রব আরও বলেন, ‘২৭ তারিখ নিয়ে ইতিমধ্যে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে বিরোধী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে নানা কথা বলছে।’

জেএসডির সভাপতি অভিযোগ করেন, ‘দেশের ৯০ ভাগ সম্পদ ১০ ব্যক্তির কাছে। তাই ব্যবসায়ীরা বলছেন আপনাকেই (প্রধানমন্ত্রী) ক্ষমতায় থাকতে হবে। কিন্তু পৃথিবীর কোনো শক্তিই আপনাকে রাখতে পারবে না।’

আরও পড়ুন

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ঢাকায় ক্ষমতাসীনদের সমাবেশ ছিল ২৪ তারিখ। তারা সেটা ২৭ তারিখে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাধাতে চায়। তারা সহিংসতা না করলে বিরোধী দল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করবে। তিনি আরও বলেন, সরকার ভয় পেয়ে গেছে। সরকারকে রাজনৈতিকভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য করতে না পারলে দেশের অবস্থার পরিবর্তন হবে না।’

আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে নির্বাচন করব, কিছু আসন ছেড়ে দেব, গুলি করতে হলে গুলি করব, ভোট কারচুপি করব—ইনিয়ে–বিনিয়ে সরকার এটাই বলতে চাইছে।’

তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে সংবিধান পরিবর্তনের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছে। এখন তারা বলছে, পরিবর্তন করা যাবে না। একটা রাজনৈতিক দল কতটা কপট হলে বলতে পারে যে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এখন এটা আর পরিবর্তন করা যাবে না।

এ আলোচনা সভার আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। জাতীয় প্রেসক্লাব, ২৫ জুলাই
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
আরও পড়ুন

জোনায়েদ সাকি অভিযোগ করেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিয়ে গত ১৫ বছরে পরিস্থিতি এমন করেছে যে, দেশে এখন কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নেই যারা দূষিত হয়নি। এখন তারাই সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা দরকার তাই করার কথা বলছে।’

চলমান সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক সমঝোতার পথে যেতে হবে, নির্বাচন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গণতন্ত্রের মঞ্চের এই নেতা বলেন, ‘সরকার মনে করছে, দমনপীড়ন করে তারা টিকে যাবে। কারণ, তাদের সঙ্গে ভারত, রাশিয়া, চীন রয়েছে। মানুষ লড়াই করে তাদের দাবি আদায় করবে, এটাই এ দেশের ইতিহাস।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য আকবর খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন