একের পর এক বিলাসবহুল গাড়ি বের হওয়ার ভিডিও, যা জানা গেল
চট্টগ্রামের একটি কারখানা থেকে বিলাসবহুল কয়েকটি গাড়ি বের হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, একটি কারখানা থেকে একের পর এক দামি গাড়ি বের হচ্ছে। সেখানে কয়েকজন ব্যক্তি তা তদারক করছেন।
যাঁরা ভিডিওটি শেয়ার করেছেন, তাঁদের ভাষ্য, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর গাড়িগুলো বের হয়। এগুলো শিল্প গ্রুপ এস আলমের গাড়ি এবং যাঁরা তত্ত্বাবধানে আছেন, তাঁরা একটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী।
বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ওই শিল্প গ্রুপ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে এ বিষয়ে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে এ ঘটনার পর দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানসহ তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে দলটি। এই নেতারা হলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এবং কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম মামুন মিয়া।
এর আগে শনিবার দুপুরে নগরের নিউমার্কেট এলাকায় দোস্ত বিল্ডিং কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিল দক্ষিণ জেলা বিএনপি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এই তিনজন। এ সময় তাঁরা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া সংবাদ এবং সামাজিক মাধ্যমে ওঠা দাবিগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট বলে মন্তব্য করেন।
তাঁদের দাবি, একটি পেপার মিলে তাঁরা গিয়েছিলেন। তবে বিএনপির নামে চাঁদাবাজির একটি অভিযোগ পেয়ে সেখানে গিয়েছিলেন তাঁরা। গাড়ির বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না।
স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই পেপার মিলের মালিকদের সঙ্গে এস আলম গ্রুপের মালিকদের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে।
দেশের আলোচিত ও সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম)। দেশের ছয়টি ব্যাংকের মালিকানা ছিল এই গ্রুপের। দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর একে একে সামনে আসে এস আলম গ্রুপের দুর্নীতি।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৫৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি কারখানার ভেতর থেকে একে একে কয়েকটি গাড়ি বের হচ্ছে। এসব গাড়ি বের করার বিষয়টি তদারক করছেন কয়েকজন ব্যক্তি।
নগরের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় যে পেপার মিলের কথা বলা হচ্ছে, সেটি মূলত মীর পাল্প অ্যান্ড পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকা রোডের শেষ প্রান্তে অবস্থিত। একই ভবনে হাসান ওয়েল মিলস নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় এই এলাকার পাঁচ প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা কেউ নাম বা পেশা প্রকাশ করতে চাননি। তবে বৃহস্পতিবার রাতে পেপার মিল থেকে অনেকগুলো গাড়ি বের হতে দেখেছেন তাঁরা। কিন্তু কার গাড়ি কিংবা লোকজন কারা ছিল, তাঁরা চেনেন না।
বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে এস আলম ও মীর পাল্প অ্যান্ড পেপার ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফলে গাড়িগুলোর মালিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামভিত্তিক কোম্পানি মীর গ্রুপ মূলত খাদ্যপণ্যের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ওয়েবসাইটে নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছে গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সালামের নাম।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের সঙ্গে আবদুস সালামের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। আবদুস সালামের মেয়ের সঙ্গে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের মেজো ছেলের বিয়ে হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন, শোকজ
শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের নম্বরে একটি নম্বর থেকে প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে এবং পরে বিএনপির নামে চাঁদা চাওয়া ও হুমকি দেওয়া হয়।
সেখানে আরও বলা হয়, চাঁদাবাজির অভিযোগটি এনামুল হককে জানালে তিনি আবু সুফিয়ানকে জানান। পরে বৃহস্পতিবার বিএনপির কয়েকজন নেতা–কর্মীকে নিয়ে কালুরঘাটে মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে যান। তাঁরা ওই প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট ছিলেন বলে জানান তাঁরা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনামুল হক জানান, বিএনপির নেতাদের সামনে এস আলমের গাড়ি সরানোর বিষয়টি মিথ্যা। আর যেখনে গিয়েছিলেন, সেটি কোনো ওয়্যারহাউস ছিল না। মীর গ্রুপের পেপার মিল ছিল। গাড়িগুলো এস আলমের কি না, সে বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না।
শনিবার সন্ধ্যায় কারণ দর্শানোর চিঠি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এস আলমের গাড়ি সরানোর অভিযোগ ওঠায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ তিনজনের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চাওয়া নেওয়া হয়েছে দল থেকে।
জানতে চাইলে কারণ ব্যাখ্যা চিঠি এখনো হাতে পাননি বলে জানান দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান।
এ ধরনের বিষয়গুলো তদন্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সনাক-টিআইবি চট্টগ্রামের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি শিল্প গ্রুপের নাম এসেছে এবং একটি রাজনৈতিক দলের নাম এসেছে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্ত করে দেখা উচিত।