সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বৈরী পরিবেশের মধ্যেও সুন্দর ভোট হয়েছে: আইনজীবী সমিতি
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মো. আবদুন নূর বলেছেন, সমিতির নির্বাচনে বিএনপন্থী আইনজীবীরা বিনা কারণে ইসিএম (ভোট গণনার জন্য) বিতর্ক তৈরি করে নজিরবিহীনভাবে ব্যালট পেপার ছিনতাই এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে ভোটের পরিবেশ বিনষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। তবে ঢাকা ও সারা দেশ থেকে আগত বিপুলসংখ্যক আইনজীবীর উপস্থিতিতে বৈরী পরিবেশের মধ্যেও এক সুন্দর ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচন ঘিরে ‘সাম্প্রতিক বিষয়’ নিয়ে সমিতির ব্যানারে আজ রোববার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আবদুন নূর সমিতির নির্বাচনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য বিএনপি–সমর্থিত প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুসকে দায়ী করেন। সমিতির মিলনায়তনে আজ বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।
একটি স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে সমিতির সম্পাদক বলেন, তাঁরা মাত্রাতিরিক্ত ছাড় দিয়েছেন এবং প্লেইং ফিল্ড তাঁদের (বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের) অনুকূলেই ছিল। কিন্তু ওকালতনামা জালিয়াতি এবং অব্যাহত দুর্নীতির কারণে আইনজীবী ভোটাররা তাঁদের পক্ষে ছিলেন না। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন থেকে সরে পড়ার জন্য তাঁরা জাতীয় রাজনীতির ধারাবাহিকতায় এখানেও অপকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাঁরা গণতন্ত্রবিমুখী আচরণ করেন। তাঁরা ভোট চায়নি। অজ্ঞাত প্ররোচনায় একটি মিথ্যা ইস্যু বানানোর চেষ্টা করে। আইনজীবীদের ব্যাপক উপস্থিতি তাঁদের সব হীন উদ্দেশ্য ভন্ডুল করে দেয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রচলিত বিধান অনুযায়ী ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান এবং সম্পাদক মো. আবদুন নূর সমিতির কনফারেন্স রুমে বসে ব্যালট পেপারে সই করছিলেন। হঠাৎ করে দরজা ধাক্কা দিয়ে বহিরাগত লোকজনসহ সন্ত্রাসী কায়দায় এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কনফারেন্স রুমে ঢুকে আহ্বায়ককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। টেবিলের ওপরে থাকা ব্যালট পেপার ছিনতাই করে কিছু ছিঁড়ে ফেলেন এবং কিছু নিয়ে যান। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন এবং ন্যক্কারজনক। এ ছাড়া ব্যালট পেপার তছনছ করেন এবং পায়ে মাড়িয়ে দলিত–মথিত করেন এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস। ফলে নির্বাচনের আগের রাতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
আবদুন নূর বলেন, ভোট গ্রহণ শুরুর চেষ্টা করলে মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুসের নেতৃত্বে অনেক বহিরাগত প্যান্ডেলে ঢুকে পড়েন ও ব্যাপক ভাঙচুর চালান। অনেক আইনজীবীকে আহত করেন। তাঁরা ভোট বর্জন করেছেন কি না, তা জানাননি। তাঁদের বিকল্প প্রস্তাব কী, তা–ও জানাননি। তাঁরা অকারণে ভাঙচুর ও হট্টগোল করতে থাকেন। এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় ভোট গ্রহণ শুরু ও সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য গ্রহণ ছাড়া কোনো বিকল্প অবশিষ্ট ছিল না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১২ মার্চ নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক (পদত্যাগকারী মনসুরুল হক চৌধুরী) ইসিএমের মাধ্যমে ভোট গণনার ঘোষণা দেন। সমিতির সভাপতি ইসিএম পদ্ধতির বিরোধিতা করেন। ইসিএমের মাধ্যমে ভোট গণনার কোনো বিধান সমিতির গণতন্ত্রে নেই। ১৩ মার্চ প্রার্থীদের পরিচিতি সভা শেষে আহ্বায়ক জানান, তিনি ইসিএমের মাধ্যমে ভোট গণনা করবেন এবং ব্যালট পেপার ছাপানোর নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ ব্যালট পেপার ছাপানোর এখতিয়ার সম্পাদকের। নির্বাচন উপকমিটির পরামর্শমতে সম্পাদক নিজেই ব্যালট পেপার ছাপিয়ে তা কমিটির কাছে হস্তান্তর করবেন। আহ্বায়ক নিরুত্তর থাকেন। ১৩ মার্চ রাতে তিনি সম্পাদক বরাবর পদত্যাগপত্র দেন।
সমিতির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, অধিকাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে। একতরফা নির্বাচন কি না—অপর প্রশ্নে সভাপতি বলেন, তাঁরা (বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা) কিন্তু নির্বাচন বর্জন করেননি। এমনকি বর্জনের ঘোষণাও দেননি। তাঁরাও ভোট পেয়েছেন। এটি একতরফা নির্বাচন নয়।
সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ভোটের দুই দিন আগে এখানে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের একটি কক্ষ থেকে লাঠি উদ্ধার করা হয়েছে। ভোটের আগের দিন ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এখানে তাঁরা ভাঙচুর করেছেন। ভোট যাতে না হয়, বিতর্ক সৃষ্টি করার জন্য তাঁরা কাজগুলো করেছেন।
পুলিশের আচরণ কীভাবে দেখছেন—এই প্রশ্নে সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর বলেন, পুলিশের আচরণ কখন কী হবে—এটি নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপরে। আগের দিন দুজন প্রার্থী নিজ হাতে যদি ব্যালট পেপার ছিনতাই করেন, লাঠিয়াল নিয়ে, নিজেই যদি এগিয়ে আসেন—সাধারণ কর্মীরা করতে পারেন, কিন্তু তাঁদের মতো পর্যায়ের প্রার্থী করতে পারেন না। কিন্তু তাঁরা নিজেরাই করেছেন।…অনেকের রুমে ভাঙচুর হয়েছে, অনেকে আহত হয়েছেন। এ অবস্থায় পুলিশ কী করতে পারত? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে তাদের যা দায়িত্ব ছিল, সেটিই তারা পালন করেছে। সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের যে সমিতি, সেই সমিতিতে যদি একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়। এখানে যদি কেউ ব্যাপক ভাঙচুর চালান, তাহলে পুলিশের যা কর্তব্য—পুলিশ তো এসে বসে থাকবে না? এমনকি পুলিশও আহত হয়েছে। সে ক্ষেত্র পুলিশ কি বসে থাকবে? পুলিশ যা করেছে, আইন ও সংবিধান অনুসারে করেছে।
সাংবাদিকদের প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘দুই দিন দায়িত্ব পালনকালে ঘটনার আকস্মিকতায় আপনারা কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সামগ্রিক দায়ভার বিএনপির গণতন্ত্রবিরোধী, ভোটবিরোধী, নির্বাচনবিমুখ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। সামগ্রিক বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সংযম, দায়িত্বশীলতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল অঙ্গীকারের পরিচয় দিয়েছি।’