অভিমত
ফরিদ-রাকিবরা সরকারি সম্পদকে যেভাবে নিজেদের করে ফেলেন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ও হবিগঞ্জের বাহুবল থানার ওসি নিজের দাবি করে থানা থেকে এসি খুলে নেওয়ার পর বিতর্ক শুরু। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ অন্য দাতারা বলেছেন, তাঁরা থানার ওসিকে এসি দিয়েছেন। কোনো ব্যক্তি ওসিকে নয়। কিন্তু সংসদ সদস্যরা কি প্রকল্পের অর্থ নিজের ইচ্ছায় যত্রতত্র ব্যবহার করতে পারেন? এটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের ঘটনা তামাদি হতে না হতে হবিগঞ্জের বাহুবলে থানার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র (এসি) খুলে নিয়ে গেলেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। পরপর এমন দুটি ঘটনা দেখে থানায় এসব কী হচ্ছে—এমন প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। তাঁদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, এই চর্চা থানায় একেবারেই নতুন। তাহলে কি এই দুটি ঘটনাকে দুই থানার সেই দুই ওসি ফরিদ-রাকিব চর্চা বা ফরাচ (সংক্ষেপে বললাম) বলে ব্র্যান্ডিং করার সুযোগ আছে?
মনে হয় না, এই চর্চাকে লেট লতিফ বা গৌরী সেনজাতীয় কোনো তকমা দেওয়া যাবে। থানায় এই এসি চর্চা প্রথম কে শুরু করেছিল, সেটা গবেষণার বিষয়। কিন্তু খাসলতের হার্ডডিস্কে এটা যে অনেক দিন ধরেই সেঁটে আছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ১৯৯২-৯৩ সালে কাম্পুচিয়াকে কট্টর কমিউনিস্টদের হাত থেকে উদ্ধার করে আবার তাকে কম্বোডিয়া করার নকশা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ডাক পড়েছিল। পশ্চিমারা সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তখন বদ্ধপরিকর। ভোটার তালিকা, ব্যালট বাক্স, সিল, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, পোলিং বুথ, পোলিং এজেন্ট ইত্যাদি কমিউনিস্ট কাম্পুচিয়ার জন্য একেবারেই নতুন বোলচাল।
অন্যদিকে সেই ১৯২০ সাল থেকে এসবের সঙ্গে উপমহাদেশের যোগসূত্র। ব্রিটিশ ভারতে ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ও প্রাদেশিক কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত করতে ১৯২০ সালে সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল। এটি ছিল ব্রিটিশ ভারত তথা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচন।
বাংলাদেশ থেকে ভোটপটু এলেমদারদের জাতিসংঘ সেখানে নিয়ে যায়। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচন আয়োজনে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের শ খানেক বেসামরিক কর্মকর্তা কম্বোডিয়ার সেই নির্বাচনে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের কাজ আর দক্ষতা নিয়ে কারও কোনো সেকায়েত ছিল না। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা সুনাম কুড়িয়েছিলেন। পুরস্কারস্বরূপ দু-একজন পদক-ক্রেস্ট ইত্যাদি পেয়েছিলেন।
গোল বাধল বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলটির দেশে ফেরার দিন। সিঙ্গাপুর হয়ে তাঁদের দেশে ফেরার কথা। নমপেন থেকে যথারীতি উড়াল দিয়ে সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরে ট্রানজিট লাউঞ্জে অপেক্ষা করছেন সবাই। সেখানে ‘কর্তৃপক্ষের’ কিছু প্রতিনিধি কানে কানে একটা কথা এলান করে দিলেন—কেউ যদি ভুলে অফিসের কোনো কিছু নিয়ে এসে থাকেন, তাহলে যেন কাউন্টারে জমা দিয়ে একটা রসিদ নিয়ে নেন। অন্যথায় ব্যাগ
চেক করে কিছু পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আসলে ৩২টা ল্যাপটপের হদিস পাচ্ছিল না কর্তৃপক্ষ। মুহূর্তে ‘ভুলে’ নিয়ে আসা বা ব্যাগের মধ্যে থেকে যাওয়া ল্যাপটপের পাহাড় জমে গেল কাউন্টারে। মানুষমাত্রই ভুল হয়। অফিসের মালামাল আর নিজের মাল-সামানের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারার অসুখ আমাদের পুরোনো এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অমোচনীয়।
সরকারি কার্যালয়ের কামরা কারও বাসরঘর নয় যে মন চাইলেই বর তাঁর মনের মতো করে ঘরটা আরাম-আয়েশের সুবিধায় ভরপুর করে নেবেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ চাহিদার প্রয়োজনে সংযোজন-বিয়োজন করা যেতে পারে। তবে সবটাই হবে নিয়ম মেনে, অনুমতি সাপেক্ষে। সরকারি খাতায় লিপিবদ্ধ থাকতে হবে সবকিছু। ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলে খুলে নেওয়ার সময় প্রমাণ দাখিল করেই সেটা নেওয়া যাবে। অন্যথায় এগুলো রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে।
ষাটের দশকের কথা, তখনো এডিসি পদ সৃষ্টি হয়নি। জেডিসি বা জয়েন্ট কালেক্টর তখন ডিসি বা ডিএমকে সহযোগিতা করতেন। জেলার সরকারি সম্পত্তি, পরিত্যক্ত বাড়িঘর বা বেদখলে যাওয়া সরকারি সম্পত্তি, দেবোত্তর এবং ওয়াক্ফ তাঁর দেখভাল করার দায়িত্ব। দেশভাগের পর সরকার প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নানা বাড়িঘর, স্কুল-দালান ‘রিকুইজিশন’ করে নেয়।
কুষ্টিয়া শহরের সবচেয়ে প্রাচীন হাই ইংলিশ স্কুল দখল করে পুলিশ লাইন করা হয়। সদ্য মহকুমা থেকে জেলা হওয়া শহরে পুলিশ লাইন ছিল না। নিরুপায় শহরবাসীকে বলা হলো, স্কুল বড়, না দেশ বড়। অকাট্য যুক্তি, অন্য একটা বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হলো প্রাচীন এই বিদ্যালয়কে।
তবে কুষ্টিয়া শহরবাসী হাল ছাড়েননি। তাঁরা স্কুল ফেরতের দাবিতে এককাট্টা হতে থাকেন। নাগরিকদের পক্ষ থেকে দরখাস্তের পর দরখাস্ত আর দেনদরবার চলতে থাকে।
জেডিসি ছিলেন এসব সামাল দেওয়ার দায়িত্বে। প্রবীণদের একটি প্রতিনিধিদল একবার বিদ্যালয়টি খালাসের ব্যাপারে দেনদরবার করতে গিয়ে দেখেন, জেডিসি তাঁর সরকারি বাসভবনের অফিস কক্ষে বসে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি থেকে আনা আবলুস কাঠের চেয়ারে। বলা বাহুল্য, সেই চেয়ার আর কখনো কুঠিবাড়িতে ফেরত যায়নি। পরে জেডিসির ব্যবহারের জন্য তিনি সেটা রেখেও যাননি। তাঁর ‘শিকার’ তিনি রেখে যাবেন কেন?
সত্তরের দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমাদের এক সহপাঠী তাঁর তিন বোনের অনেক আদরের একটিমাত্র ভাই ছিলেন। তাঁর বোন জামাইয়েরা দেশের নানা জেলায় নানা প্রতিষ্ঠানে বড়সড় চাকরি করতেন। ছুটি হলেই বোনদের আদরের ডাকে তাঁকে ছুটতে হতো। তাঁর ভ্রমণসঙ্গী হয়ে একবার গেলাম ছাতকে।
সেখানকার এক সরকারি কারখানার প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে সদ্য দায়িত্ব নিয়েছেন দুলাভাই। তিনি সাজানো বাসভবনের হকদার। কারখানার স্টেট (বিষয়সম্পত্তি) বিভাগের লোকজন বাসভবনের অনেক কিছুই তাঁকে বুঝিয়ে দিতে পারেননি। আগের প্রধান প্রকৌশলী যাওয়ার সময় অনেক কিছুই ‘ফরিদ-রাকিব’ কায়দায় নিয়ে গেছেন।
খুবই উদ্ভাবনী কায়দায় তিনি সেসব করেছিলেন। যেমন যে জানালায় চার টুকরা পর্দা ছিল, সেখানে দুই টুকরা নিয়ে গেছেন। যেখানে দুই টুকরা পর্দা টান টান করে টাঙিয়ে দিলেই আবরু রক্ষা হয়, সেখানে কেন চার টুকরা দেওয়ার বিলাসিতা!
বাহুবল, ভূঞাপুর থানার ওসির এসি-বিতর্ক
হবিগঞ্জের বাহুবল থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম খান ঢাকার কাছের মাধবপুর থানায় বদলি হয়েছেন। বদলির আদেশ পেয়েই ঝটপট তিনি অফিসে ও বাসভবনের দুটি এসি খুলে ফেলেন। দেশের অনেকে ঘুষের বদলে থানা সাজিয়ে দিয়ে দারোগাদের দরবার রওশন করে নেক নজরে থাকার চেষ্টা করেন। সমাজসেবকের লেবাসে তাঁরা সেখানে দান করেন আসবাবপত্র, দামি শোপিস বা দারোগার কক্ষের সৌন্দর্যবর্ধনকারী উপহারসামগ্রী। রাকিব দুই এসির পাশাপাশি সেগুলোও ব্যাগে ভরে চালান করে দেন।
ওসি রাকিবের দাবি, ওগুলো তাঁর নিজের টাকায় কেনা। স্থানীয় সংসদ সদস্য তাঁর এই দাবিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি কিনে দিয়েছি।’ কথায় কথা বাড়ে। সংসদ সদস্য কোথা থেকে টাকা পেলেন? কেন দারোগাকে অফিসে-বাসায় তাঁর ঠান্ডা বাতাস খাওয়াতে হবে?
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানালেন, টাকাটা তাঁদের মন্ত্রণালয়ের। স্থানীয় দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানে ত্রাণ তহবিল থেকে সংসদ সদস্যদের এই টাকা দেওয়া হয়। আশা থাকে গ্রামীণ অবকাঠামোর তাৎক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংসদ সদস্য এই টাকা (টিআর বা টেস্ট রিলিফ) খরচ করবেন। স্থানীয় দিনমজুরদের কর্মসংস্থান হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য টিআর-এর টাকায় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাহুবল থানার ওসির অফিস কক্ষ ও বাসভবনে দুটি এসি লাগিয়ে দেন। এই টাকার আসল হকদার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ওসি-ডিসি বা তাঁদের কোনো খেসিরা (আত্মীয়) নন। বিষয়টি চাউর হওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য খেপেছেন সদ্য বমাল বদলি ওসির ওপর।
সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ওসির এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে। সরকারি প্রকল্পের টাকায় থানা ও ওসির বাসভবনের জন্য এসিগুলো কিনে দেওয়া হয়েছে। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে দিইনি। এখানে যিনিই ওসি হয়ে আসবেন, তিনিই তা ব্যবহার করবেন।
ওসি মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলামের আশীর্বাদ নিয়ে যমুনার বালুমহাল কারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন—এমন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে অথবা অন্য কোনো কারণে হোক ভূঞাপুরের ওসিকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। বদলির খবর পেয়েই তিনি থানায় লাগানো এসি, টেলিভিশন, আইপিএস ও সোফা তাঁর বাসায় নিয়ে যান। তাঁরও দাবি, ওগুলো তাঁর ব্যক্তিগত টাকায় কেনা। অথচ স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, যমুনা নদীর বালুমহাল কারবারি ও ব্যবসায়ীরা উপঢৌকন হিসেবে থানায় এসব জিনিস দিয়েছিলেন। ব্যক্তি ওসিকে নয়। মসজিদের ইমাম বদল হলে তিনি কি এসি-ফ্যান খুলে নিয়ে যান?
সংসদ সদস্যের ইচ্ছাই কি শেষ কথা
সংসদ সদস্য টিআর প্রকল্পের টাকা টিআরের কাজেই সততার সঙ্গে ব্যয় করবেন। মসজিদের টাকা মসজিদের কাজেই খরচ করবেন। এমনটাই আশা করা যায়। এখানে কথা থেকে যায়, এসব অর্থের কোনো নিরীক্ষা নেই। তাই টিআরের টাকা ওসির খেদমতে চলে গেলেও জানার উপায় নেই। একজন সংসদ সদস্য প্রতিবছর চার কোটি টাকা করে থোক বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। আগে এর পরিমাণ ছিল দুই কোটি টাকা। থোক বরাদ্দের
টাকা একজন সংসদ সদস্য নিজের পছন্দমতো উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ করতে পারেন। তিনি কোন প্রকল্পে সেই টাকা খরচ করবেন, সেটি পুরোপুরি তাঁর এখতিয়ার।
থোক বরাদ্দের বাইরেও সংসদ সদস্যরা অন্যান্য সূত্র থেকেও ইচ্ছাধীন তহবিলের অর্থ পান। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ছাড়াও ধর্ম মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে আছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবছরের মতো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রত্যেক সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ সংস্কার বা মেরামত বা পুনর্বাসনের জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মন্দির সংস্কার বা মেরামত বা পুনর্বাসনের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং মহিলা আসনে নির্বাচিত প্রত্যেক সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ সংস্কার বা মেরামত বা পুনর্বাসনের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং মন্দির সংস্কার বা মেরামত বা পুনর্বাসনের জন্য ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের হক
কোন পদের বা শ্রেণির কর্মকর্তা কী কী সুযোগ-সুবিধা পাবেন, কী পাবেন না—তা চাকরিবিধিতে (বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস) খুবই পরিষ্কারভাবে বয়ান করা আছে। কে হাতলওয়ালা চেয়ারে বসবেন, কার চেয়ারে হাতল থাকবে না। সবুজ কালিতে কে লিখতে পারবেন, কে পারবেন না। কার চেয়ারের পেছনে তোয়ালে থাকবে, কার থাকবে না। এমন কি কোন পদের জন্য কত বড় টেবিল আর অফিস-আসবাব কী থাকবে—সবই চাকরিবিধিতে লেখা আছে। এতে কে ফ্যানের নিচে বসবেন আর কে এসি ঘরে বসবেন, সেটাও বলে দেওয়া হয়েছে।
সরকারি কার্যালয়ের কামরা কারও বাসরঘর নয় যে মন চাইলেই বর তাঁর মনের মতো করে ঘরটা আরাম-আয়েশের সুবিধায় ভরপুর করে নেবেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ চাহিদার প্রয়োজনে সংযোজন-বিয়োজন করা যেতে পারে। তবে সবটাই হবে নিয়ম মেনে, অনুমতি সাপেক্ষে। সরকারি খাতায় লিপিবদ্ধ থাকতে হবে সবকিছু। ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলে খুলে নেওয়ার সময় প্রমাণ দাখিল করেই সেটা নেওয়া যাবে। অন্যথায় এগুলো রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে।
ইচ্ছাধীন তহবিলের লাগাম টানা দরকার
একেকজনের ইচ্ছার পায়রা একেক রঙের। অবসরে যাওয়া এক সচিব জানালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। চাকরিজীবনে তিনি উপজেলা পরিষদের দুজন চেয়ারম্যানের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ তখন উপজেলা চেয়ারম্যানদের ইচ্ছাধীন তহবিল চালু করেন। দুষ্টু লোকেরা এখনো বলে থাকেন, চেয়ারম্যানদের চরিত্র নষ্ট করতেই নাকি এই তহবিল করা হয়েছিল।
যাহোক, এই সচিব দেখেছিলেন একই তহবিল দুজন মানুষ দুইভাবে ব্যবহার করেছেন। প্রথমজন পূজার আগে টাকাটা ওঠাতেন আর হেঁটে হেঁটে মণ্ডপে গিয়ে অনুদান দিয়ে আসতেন।
মণ্ডপের আকার, মানুষের সমাগম ইত্যাদি দেখে তিনি টাকা দিতেন। এই মানুষটিকে সরিয়ে পরের মেয়াদে যিনি চেয়ারম্যান হলেন তিনি টাকা তুলতেন হাটবারে আর বাড়ির জন্য বাজার-হাট করতেন। সত্য-মিথ্যা সচিবই ভালো জানেন। হাজার হোক, দিনের শেষে মানুষের করের অর্থে এই তহবিল হয়ে থাকে। তাদের রক্ত পানি করা করের টাকায় কে কেমন বাজনা বাজাবে, তার একটা নীতিমালা আর জবাবদিহি থাকা খুবই জরুরি।
গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক [email protected]