গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি রোববার

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনেছবি : শুভ্র কান্তি দাশ

সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি দিয়েছেন। তাঁরা আগামীকাল রোববার রাজধানীতে গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

একই সময়ে আন্দোলনে থাকা সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও গণপদযাত্রা করে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে আজ শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সমন্বয়কেরা। পাশাপাশি এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট কর্মসূচিও অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সব গ্রেডের সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের লক্ষ্যে আগামীকাল সকাল ১১টায় গণপদযাত্রা ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি করব। কর্মসূচি শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা এই গণপদযাত্রায় অংশ নেবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বরাবর গণপদযাত্রা করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন। দাবি আদায়ে যৌক্তিক ও গঠনমূলক সমাধানের জন্য যতগুলো পথ প্রয়োজন, তার সবই আমরা অবলম্বন করব।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাসনাত বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে ৫ শতাংশ কোটাকে আমরা যৌক্তিক মনে করছি৷ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা এই ৫ শতাংশের অন্তর্ভুক্ত। আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধী নই, বিরোধিতা করছি নাতি-পুতি কোটার। তবে কোটার শতাংশ নিয়ে সরকারের গবেষণাভিত্তিক তথ্য থাকলে তা নিয়ে পরে আলোচনা হতে পারে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘটের কর্মসূচি নিয়ে কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার আমাদের আন্দোলন দমনের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিচ্ছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। সরকারের উচিত ছিল, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুরু থেকেই আলোচনা করে সংকট নিরসন করা। কিন্তু তারা নানা শক্তির মাধ্যমে এই আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটি সরকারের জন্যই বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে। এমন কিছু হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’ তিনি জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। আন্দোলন চলবে, কর্মসূচিতে হয়তো ভিন্নতা আসবে। তিনি বলেন, ‘দাবি আদায় না হলে আমরা বৃহত্তর গণ–আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা সমাজের সব অংশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।’

গতকাল শুক্রবার শাহবাগ থানায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, সে বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অজ্ঞাতনামা মামলা কেন দেওয়া হলো, আমরা পুলিশের কাছে সেই জবাবদিহি চাইছি। মামলা দিতে হলে আমাদের নামেই দেওয়া হোক। শিক্ষার্থীদের হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। এ ছাড়া আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনতে হবে৷’

সরকার দায় এড়ানোর জন্য আদালতকে ব্যবহার করছে এবং কালক্ষেপণের নাটক করছে বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। সব ছাত্রসংগঠনকে দায়িত্বশীল আচরণ এবং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তা না হলে শিক্ষার্থীরা তাঁদেরও প্রত্যাখ্যান করবেন৷

কুমিল্লায় গিয়েছিলেন সমন্বয়কেরা

গত বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিতে কুমিল্লায় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়েছিল। আজ সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আজ আমরা (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম৷ সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অন্য সব ঘটনাকে ছাড়িয়ে গেছে। তাঁদের সমস্যাগুলো সরাসরি শোনা ও পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা গিয়েছিলাম। সেখানে পুলিশ সুপারের কার্যালায়ে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক করেছি আমরা।’

সারজিস আরও বলেন, যৌক্তিক দাবিতে ১ জুলাই থেকে আন্দোলন চলছে। কিন্তু রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক মহলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীদের যদি কোনোভাবে উসকে দেওয়া হয়, আন্দোলনকে যদি অন্য কোনো খাতে নেওয়া বা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়, তা ভালো ফল বয়ে আনবে না। তিনি আরও বলেন, সরকার সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে দাবি মেনে নিলে শিক্ষার্থীদের আর রাজপথে যেতে হয় না৷

সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনে হামলা ও বাধার তথ্য তুলে ধরেন আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।