শরীয়তপুরের বিচারক ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা জানাতে তলব

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

ছিনতাইয়ের মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া দুই আসামিকে আটক, নির্যাতন ও তাঁদের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকার চেক নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি উচ্চ আদালতের জামিন সত্ত্বেও ওই দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওই ঘটনায় প্রয়োজনীয় আদেশ চেয়ে করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

পুলিশের দুই কর্মকর্তা হলেন শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) রাসেল মনির এবং তৎকালীন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। আগামী ১৬ জুলাই তাঁদের আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে ওই ঘটনায় নেওয়া পদক্ষেপ ও নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।

জামিন না হলেও এভাবে মারবে কেন
শুনানির শুরুতে আবেদনকারী ব্যক্তিদের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ঘটনা কী নিয়ে? তখন আইনজীবী মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, ছিনতাইয়ের এক মামলায় ৯ জন আসামির মধ্যে ৭ জনকে গত ২৯ মে হাইকোর্ট (এই আদালত) ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। এ বিষয়ে সেদিনই লইয়ার সার্টিফিকেট (আগাম জামিন মঞ্জুর বিষয়ে) দেওয়া হয়। ৩০ মে জামিন আবেদনকারী বকুল চোকদার ও সুমন চোকদারকে তাঁদের বাসা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তাঁরা দুই ভাই। তাঁদের ধরতে গেলে তাঁরা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন বলে ওসিকে ওই সার্টিফিকেট দেখান। তখন ওসি লইয়ার সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলেন। সেদিন বাসায় নির্যাতনের পর থানায় নিয়ে রাতে বকুল ও সুমনকে নির্যাতন করে পুলিশ।

আইনজীবী মুজিবুর রহমান বলেন, তাঁদের স্ত্রী ও ছোট বাচ্চাদের ৩১ মে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বকুল ও সুমনের বাবা রশিদ চোকদারকে সেদিন ৭২ লাখ টাকার চেক দিতেও বলা হয়।

এ সময় আদালত বলেন, এ নিয়ে অন্য আদালত কোনো আদেশ দিয়েছেন? তখন ‘না’ সূচক জবাব দিয়ে মুজিবুর রহমান বলেন, আসামিদের ১ জুন আদালতে হাজির করা হলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাঁদের কারাগারে পাঠান। পরে ৪ জুন আদালত তাঁদের জামিন দেন, যা উচ্চ আদালতের আদেশের লঙ্ঘন।

আদালত বলেন, হাইকোর্টের আদেশ এখন অনলাইলে দেখা যায়। জামিন না হলেও এভাবে মারবে কেন? তখন আইনজীবী মুজিবুর রহমান বলেন, ছোট ছোট বাচ্চা ও মহিলাদের থানায় নিয়ে আসা হয়। মহিলারা আসামি নন। ওই দুই ভাইয়ের একজন পানি চাইলে অন্য ভাইয়ের মূত্র পান করতে দেওয়া হয়—এটা কি পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেল? হাইকোর্টের আদেশ মানল না। ৩১ মে তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকার চেক নেওয়া হয়। পুলিশের সোর্স শহীদুল ইসলামের নামে ওসি ৭২ লাখ টাকার চেক নেন বলে অভিযোগ করেন মুজিবুর রহমান।

আদালত বলেন, ছিনতাই হয়েছিল কত টাকা? তখন মুজিবুর রহমান বলেন, সাড়ে ১৭ হাজার ইউএস ডলারসহ ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। জামিন শুনানিতে বলেছিলাম, বাদীর পকেটে এত টাকার মূল্যমানের ইউএস ডলার কীভাবে এল? অথচ ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ব্যবসায়ী।

প্রত্যাহার কোনো শাস্তি নয়
শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, তাঁরা জামিন পেয়েছেন। আদালত বলেন, ঘটনা কি আগাম জামিনের পরে ঘটেছে? তখন মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, আগাম জামিন পাওয়ার পরে ঘটেছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত বলেন, কোর্টকে অ্যাসিস্ট (সহযোগিতা) করতে হবে। রাষ্ট্রকে মূল পথে চালাতে হবে। কোনো পক্ষে–বিপক্ষে থাকার বিষয় না। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘পক্ষে–বিপক্ষে নই। আদালত যথাযথ আদেশ দেবেন–এটি আমরাও চাই।’

আদালত বলেন, ঘটনার পর তাদের শরীরে দাগ দেখা গেছে। এ জন্য বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আদালত বলেন, ‘এটি কোনো শাস্তি নয়। তার আরও ভালো হয়েছে। তাকে প্রমোট করেছেন।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে দাখিল করার কথা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিজ পদে বহাল আছেন।

আদালত বলেন, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাইকোর্টের আদেশ (আগাম জামিন) দেখেছিলেন কী ? জবাবে আইনজীবী মুজিবুর রহমান বলেন, ওখানে আসামিপক্ষে যিনি আইনজীবী ছিলেন, তিনি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পাওয়ার কথা বলেছিলেন। ল’ইয়ার সার্টিফিকেট দেখিয়েছিলেন। এরপরেও কারাগারে পাঠানো হয়।

আদালত বলেন, উনি (চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) জানেন, অনলাইনে হাইকোর্টের অর্ডার দেখা যায়। এক্ষেত্রে সমস্যা হলে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে জানাতে পারতেন। এরপর আদেশ দেওয়া হয়।