বাংলাদেশে গত অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত মাসে দেশটির বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন বাড়িয়েছে সরকার। এ ছাড়া অর্থনৈতিক টানাপোড়েনও অব্যাহত ছিল। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতেও সংঘাত চলেছে।
বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। অক্টোবরের পরিস্থিতি নিয়ে আইসিজির ওয়েবসাইটে সম্প্রতি ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাটি প্রতি মাসেই এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গত জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ‘অপরিবর্তিত’ থাকলেও অক্টোবরে অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এবারের প্রতিবেদনে অবনতিশীল পরিস্থিতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে গুয়াতেমালা, মিয়ানমার, তুরস্ক, মোজাম্বিক, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সুদান, ফিলিস্তিন, ইসরায়েল, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেন। অপর দিকে আগের তুলনায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে কলম্বিয়া ও ভেনেজুয়েলায়।
আইসিজি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংঘাত প্রতিরোধ এবং সমাধান দিতে বিশ্লেষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকে। এ লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে গবেষণা, বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কাজ করে থাকে সংস্থাটি।
আইসিজি বলেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধী দল বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন বাড়িয়েছে সরকার। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। ওই সমাবেশ ঘিরে দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মূলত পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এদিন দেশের অন্যান্য বড় শহরেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। এতে এক পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। আহত হন অনেকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীতে সংঘর্ষের পর দিন ২৯ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির প্রায় ১০০ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। বিএনপির দাবি, ২১ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত দলটির প্রায় তিন হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৯ অক্টোবর সারা দেশে হরতাল ডাকে বিএনপিসহ বিরোধীরা। এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী অবরোধ জারি করা হয়। এতে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে আইসিজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ অক্টোবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের নিচে নেমেছে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে সংঘাত চলমান রয়েছে বলে জানানো হয়েছে আইসিজির প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, ২ অক্টোবর সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) এক নেতাকে আটক করে র্যাব-২। পরে ৪ অক্টোবর এক বন্দুকযুদ্ধে আরসার এক সদস্য নিহত হন। ৯ অক্টোবর সশস্ত্র গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের সন্দেহভাজন সদস্যরা আরসার দুই সদস্যকে হত্যা করেন। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে মাদক চোরাচালান ও হত্যার অভিযোগে গত মাসে কক্সবাজারে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে।