কোটাব্যবস্থার সংস্কার ও প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের শাস্তি চায় ছাত্র ইউনিয়ন
কোটাব্যবস্থার সংস্কার ও সরকারি চাকরি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ৷ দাবি আদায়ে আগামীকাল বুধবার বিক্ষোভ সমাবেশ এবং আগামী সপ্তাহে উন্মুক্ত আলোচনার কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে তারা৷ দুটি কর্মসূচিই হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে৷
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের এই দাবি ও কর্মসূচির কথা জানান ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের নেতারা৷
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়নের এই অংশের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ৷ এতে বলা হয়, ছাত্র ইউনিয়ন মনে করে, কোটাপদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার সাধন করতে পারলেই এর স্থায়ী সমাধান সম্ভব৷ মুক্তিযোদ্ধাদের তৃতীয় প্রজন্মের জন্য কতখানি কোটা বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন, তা নিয়ে অবশ্যই উপযুক্ত আলোচনা হওয়া উচিত৷ পাশাপাশি কোটাপদ্ধতিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, নারী ও প্রতিবন্ধী কোটাকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে৷
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা-খরাকবলিত এবং পার্বত্য দুর্গম জেলাগুলোর জন্য অনগ্রসর জেলা কোটাও সংরক্ষণ করা উচিত৷ তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগে ৫৬ শতাংশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগে ৮০ শতাংশের বেশি কোটা বরাদ্দ রাখা নিয়োগপ্রার্থী কোটাহীন শিক্ষার্থীদের প্রতি রাষ্ট্রের বিরাট বৈষম্যমূলক আচরণ৷ আবার কোটাপদ্ধতির পুরোপুরি বাতিল চাওয়াও সংবিধানসম্মত নয়৷ এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থে আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে সরকার অবিলম্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে কোটাপদ্ধতির সংস্কার সাধনের মাধ্যমে চলমান সংকটের একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করবে৷
চলমান পরিস্থিতিতে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়৷ এগুলো হলো রাষ্ট্রের সব শ্রেণির নিয়োগপ্রক্রিয়ায় কোটাপদ্ধতির সংস্কার করে সর্বোচ্চসংখ্যক মেধার ভিত্তিতে আসন নিশ্চিত করা, পোষ্য কোটা বাতিল, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও নারী কোটা সংস্কার করে যৌক্তিক পর্যায়ে আনা; ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জেলা কোটার ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানকে গুরুত্ব দিয়ে সংস্কারের পথে হাঁটা এবং কোটা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি বিশেষায়িত টাস্কফোর্স গঠন, এই টাস্কফোর্সে শিক্ষাবিদ, সমাজগবেষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা (এই টাস্কফোর্সের কাজ হবে কোটাপদ্ধতির সমস্যা চিহ্নিত করা ও যৌক্তিক সংস্কার সাধনের জন্য রূপরেখা প্রস্তাব করা)। পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় যে ১৭ জনকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁদের অতি দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন৷
দাবি আদায়ে ছাত্র ইউনিয়নের দুটি কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে৷ এগুলো হলো আগামীকাল দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং আগামী সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘কোটাব্যবস্থার আদ্যোপান্ত, সংকট এবং সমাধান’ শীর্ষক উন্মুক্ত সংলাপ৷ এই সংলাপে শিক্ষাবিদ, মানবাধিকারকর্মী, উচ্চ আদালতের আইনজীবী, বিভিন্ন অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন বলে ছাত্র ইউনিয়ন জানিয়েছে৷
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্র ইউনিয়নের এই অংশের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার বলেন, প্রশ্নফাঁসের সুযোগ নিয়ে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা ওই ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুতি চান৷ পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও চান তাঁরা৷