বাড়ি পাচ্ছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব-মুখ্য সচিব, খরচ ধরা হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা
জনপ্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের দুটি পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের জন্য বাসভবন করছে সরকার। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় পাশাপাশি নির্মিত হবে দুটি ভবন। প্রকল্প অনুসারে এগুলো নির্মাণে খরচ হবে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। আর এই টাকার জোগান দেবে সরকারি তহবিল।
প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুসারে প্রতিটি ভবন হবে তিন তলা। সাড়ে ১৮ হাজার বর্গফুটের। প্রতিটি ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে সাড়ে ২১ কোটি টাকা করে। এর মধ্যে প্রতিটি বাসভবনে দুই সেট সুইমিং পুল হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা।
গতকাল রোববার ‘মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সরকারি বাসভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ৫০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় পরিকল্পনামন্ত্রী নিজ ক্ষমতাবলে এটি অনুমোদন করতে পারবেন।
প্রকল্পে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের বাসভবনে দুই সেট সুইমিং পুল বানানোর পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। সুইমিং পুল বানাতে এত টাকা খরচের প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার। এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় তিনি সুইমিং পুলের খরচকে অতিরিক্ত বলেছেন।
প্রকল্পের কারণ হিসেবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলছে, বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ দুটি পদের বিপরীতে নির্ধারিত বাসভবন নেই। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এখন রাজধানীর মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে থাকেন। আর মুখ্য সচিব থাকেন রাজধানীর গুলশানে সরকারি বাসভবনে। তবে দুটি বাসভবন এই পদের বিপরীতে নির্ধারিত নয়। যখন যিনি এই দুটি পদে বসেন, তাঁরা তাঁদের পছন্দমতো সরকারি বাসায় ওঠেন। সে জন্য দুটি পদের বিপরীতে আলাদা বাসভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সরকার দেশবাসীকে কৃচ্ছ্রসাধনের পরামর্শ দিচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নতুন প্রকল্প অনুমোদন না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ ও যানবাহন কেনাকাটা সীমিত করা হয়েছে। এমন সময়ে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলো।
অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থায় খরচ হবে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ খাতে খরচ হবে ১৮ লাখ টাকা।
গণপূর্ত অধিদপ্তর যা বলছে
গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ মোহাম্মদ জোবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা চলছে। নকশা ও স্থান চূড়ান্ত করতে অনেক সময় চলে গেছে। তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের জন্য নির্ধারিত বাসভবন নেই। সে জন্য এই উদ্যোগ।
রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় যেখানে দুটি বাসভবন হবে, সেখানে এখন ছয়তলা দুটি ভবন আছে। একটি দোতলা গ্যারেজ ও আবাসিক ভবনও আছে। গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, এসব ভবন অনেক পুরোনো। এগুলো ভেঙে তাই নতুন বাসভবন করা হবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সরকার তিন শ্রেণিতে প্রকল্প বাছাই করেছে। সে ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের জন্য সরকারি বাসভবন প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে কি না, সেটি ঠিক করবে পরিকল্পনা কমিশন। যদিও প্রকল্পটি অনুমোদনে সরকারের শীর্ষ মহলের সবুজ সংকেত রয়েছে বলে জানা গেছে। তা ছাড়া প্রকল্পটির কাজ দেড় বছরের মধ্যেই শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে।
সুইমিং পুলের জন্য পাঁচ কোটি
প্রকল্পে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের বাসভবনে দুই সেট সুইমিং পুল বানানোর পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। সুইমিং পুল বানাতে এত টাকা খরচের প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার। এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় তিনি সুইমিং পুলের খরচকে অতিরিক্ত বলেছেন।
তবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ মোহাম্মদ জোবায়ের বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, সুইমিং পুলের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। পানি বিশুদ্ধ করা ও পাম্পের বিষয় আছে। কারিগরি অনেক দিক জড়িত। এটি স্বাভাবিক জলাধার নয়। সে জন্য খরচ বেশি। তবু খরচ কম বেশি হতে পারে।
দুটি ভবনের সাজসজ্জাতেই খরচ দুই কোটি
প্রকল্পের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনতলা দুটি ভবন নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে সাড়ে ৯ কোটি টাকা করে। এ ছাড়া দুটি ভবনেই অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাতে খরচ হবে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। দুটি ভবনে আসবাবের পেছনে খরচ হবে দেড় কোটি টাকা। ২টি ভবনের জন্য ৭টি করে মোট ১৪টি এলইডি টেলিভিশন কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ৯ লাখ টাকা। সিসিটিভি সিস্টেম কেনা হবে ৩২টি।তাতে খরচ হবে ৬০ লাখ টাকা। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার জন্য পৌনে দুই কোটি টাকা খরচ হবে। এক হাজার কেজি লিফটে (ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড) খরচ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থায় খরচ হবে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
এ ছাড়া বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ খাতে খরচ হবে ১৮ লাখ টাকা। সুইমিং পুলের মতো বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ খাতে খরচের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার।
তবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, পরিকল্পনা কমিশন অনেক খরচ কাটছাঁট করবে। তখন খরচ কমে আসবে।