ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা: মেয়েটির ডান হাতের দুটি আঙুল কেটে ফেলতে হবে

নারী নির্যাতন
প্রতীকী ছবি

মেয়েটির ডান হাতটি যাতে কেটে ফেলতে না হয়, তার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকেরা। তবে আপাতত মেয়েটির ডান হাতের বুড়ো আঙুল ও তর্জনী কেটে ফেলতে হবে। এই দুটো আঙুল হাতের ৬০ শতাংশ কাজ করে। ফলে আঙুল দুটি কেটে ফেললে মেয়েটির এই হাতের কার্যক্ষমতাও অনেক কমে যাবে।

৮ সেপ্টেম্বর বগুড়ায় মাদ্রাসাপড়ুয়া ১৬ বা ১৭ বছর বয়সী মেয়েটি বাড়িতে একা ছিল। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে এক দুর্বৃত্ত কোনোভাবে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। মেয়েটির গলায় চাপ দিয়ে ধরেন। সে অজ্ঞান হয়ে গেলে মরে গেছে ভেবে আশপাশে থাকা চটের বস্তা ও কাপড় দিয়ে তার শরীর ঢেকে আগুন ধরিয়ে দেন। দাউ দাউ করা আগুনের আঁচে মেয়েটির জ্ঞান ফিরলে দৌড়ে পাশের বাড়িতে এক আত্মীয়ের কাছে গিয়ে আসামির নাম উল্লেখ করে ঘটনার কথা জানায়। মেয়েটির শরীরের ২৪ শতাংশ পুড়ে গেছে।

মেয়েটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পর এলাকাবাসী আসামিকে ধরে পুলিশে খবর দেন। মেয়েটিকে উদ্ধার করে প্রথমে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর ওই মেয়ের বাবা বাদী হয়ে বগুড়ার শিবগঞ্জ থানায় ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (সংশোধনী ২০০৩) ধর্ষণসহ শরীরে দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেয়েকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ৯ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেয়েটির বাবা বলেন, ‘মা–বাবা হইয়া মেয়েটার কষ্ট আর আর দেখতে পারতেছি না। কইলজাটা ফাইট্যা যায় মেয়ের কষ্ট দেখলে। সারাটা শরীর পোড়া। ওহ! খালি কষ্ট আর কষ্ট। আসামির ফাঁসি চাই, আর কোনো ছেলে যাতে কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন কাজ করতে না পারে।’

১১ সেপ্টেম্বর ‘মেয়েটির একটি হাত কেটে ফেলতে হতে পারে’ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ওই কিশোরীর মুখের কিছু অংশ আর দুই পায়ের পাতা ছাড়া পুরো শরীর ব্যান্ডেজে মোড়ানো।

আজ সোমবার কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আশিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে জানান, মেয়েটির অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তার ডান হাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বুক, পিঠ, স্তন, পাসহ শরীরের যেসব জায়গা পুড়েছে, সব জায়গায়ই গভীর ক্ষত হয়েছে। আপাতত তার পুরো ডান হাত কেটে ফেলতে হবে না। ডান হাতের বুড়ো আঙুল ও তর্জনী কেটে ফেলতে হবে। মেয়েটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে অস্ত্রোপচার (স্কিন গ্রাফট) করতে হবে। রক্তস্বল্পতা থাকায় তাকে রক্ত দিতে হচ্ছে।

ঘটনার দিন মেয়েটির মা–বাবা বাড়িতে ছিলেন না। সেদিন ছিল শুক্রবার। দুপুরে মেয়েটির দাদি নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। এই ফাঁকে তার ওপর হামলে পড়েছিল ওই দুর্বৃত্ত। মেয়েটির বাবা প্রথম আলোকে বলেছেন, মেয়ে ধীরে ধীরে সেদিনের ঘটনার কিছু কথা বলেছে। তিনি বলেন, মেয়ের ডান হাতের অবস্থা খুব খারাপ। ঘা শুকাচ্ছে না। তাকে রক্ত ছাড়া প্রতিদিন দুটি ইনজেকশনও দিতে হচ্ছে। এগুলোর খরচ অনেক।

আরও পড়ুন

মেয়েটির বাবা জানান, বাড়ি থেকে আসার সময় কিছু টাকা এনেছিলেন। স্বজনেরা এবং বাইরে থেকেও কয়েকজন আর্থিকভাবে কিছু সাহায্য করেছেন। সেসব দিয়ে আপাতত মেয়ের চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছেন।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের লোকজন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন বলে জানান মেয়েটির বাবা। বাড়ির জায়গা বিক্রি করতেও তাঁরা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মেয়েটির বাবা বলেন, মেয়ে জানিয়েছে যে ঘটনার দিন গলায় চাপ দিয়ে ধরলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। এর আগে ধর্ষণের শিকার হয় সে। মেয়ের ওপর হওয়া এই নিষ্ঠুরতার ন্যায়বিচার চেয়ে তিনি বলেন, তিনি কোনোভাবেই আসামিপক্ষের সঙ্গে আপস করবেন না। মামলা তুলে নেবেন না। তিনি আসামির ফাঁসি চান।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেয়েটির বাবা বলেন, ‘মা–বাবা হইয়া মেয়েটার কষ্ট আর আর দেখতে পারতেছি না। কইলজাটা ফাইট্যা যায় মেয়ের কষ্ট দেখলে। সারাটা শরীর পোড়া। ওহ! খালি কষ্ট আর কষ্ট। আসামির ফাঁসি চাই, আর কোনো ছেলে যাতে কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন কাজ করতে না পারে।’

মামলাটি তদন্ত করছেন বগুড়ার শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জিল্লুর রহমান। তিনি আজ সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মামলার মূল আসামি বর্তমানে কারাগারে আছেন। আসামি স্বীকারোক্তিতে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছেন। মেয়েটি ধর্ষণের কথা অন্যদের বলে দিতে পারে, এই ভয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। মেয়েটির অন্যান্য মেডিকেল রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি।