প্রথম আলো: আপনারা বলেছিলেন, ঘূর্ণিঝড়টি অতিপ্রবল হবে। সেখানে ঝড়ের দাপট ততটা দেখা যায়নি। এর ব্যাখ্যায় কী বলবেন।
মো. আজিজুর রহমান: আমরা ঘণ্টায় ১৯০ থেকে ২১৫ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস বয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলাম, যার মাধ্যমে সাগরে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থা তুলে ধরেছি। কিন্তু বলিনি যে স্থলভাগ অতিক্রমের সময় ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইবে। বলেছিলাম, ১৫০-১৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইবে। যখন স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড়ের মেঘ স্পর্শ করে, ভূমিতে ঝড়ের অর্ধেক উঠে যায়, তখন তার শক্তি আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে। এতে বাতাসের গতি এমনিতেই কমে আসে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটারে। সেন্ট মার্টিনে বেলা ১টায় ঘণ্টায় ৯৮ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে গেছে। বেলা ২টায় ঘণ্টায় ১২১ কিলোমিটার বেগের বাতাস বয়ে যায়। আর বেলা ২টা ২০ মিনিটে ঘণ্টায় ১৪৭ কিলোমিটার গতিতে বাতাস রেকর্ড করা হয়েছে। টেকনাফে বেলা ১টা ৫০ মিনিটে ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে গেছে। এই ছিল ভূমিতে ঘূর্ণিঝড়ের উঠে আসার অবস্থা।
আমরা বরাবরই একটা কথা বলেছিলাম, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র ও ডান পাশ মিয়ানমারের ওপর দিয়ে যাবে। বাঁ পাশটা বাংলাদেশের ওপরে থাকবে। বাঁ পাশে তুলনামূলক কম প্রভাব পড়ে। সেভাবেই এটি আমাদের সেন্ট মার্টিন ও টেকনাফে আঘাত হেনেছে। যার কারণে বাতাসের গতি আমাদের অঞ্চলে একটু কম ছিল। তারপরও এখানে কম হয়নি। ঘণ্টায় ১৪৭ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে যাওয়া মানে প্রত্যাশিত পূর্বাভাস অনুযায়ীই হয়েছে।
প্রথম আলো: ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিবিধি ছিল, তাতে বাংলাদেশকে খুব বেশি স্পর্শ করবে না, এ ধরনের একটা ধারণা কী শুরু থেকেই পাচ্ছিলেন?
মো. আজিজুর রহমান: হ্যাঁ। তারপরও একটু টান ছিল উত্তরে। যদি কোনো কারণে টেকনাফ বা সেন্ট মার্টিন এসব জায়গায় কেন্দ্র চলে আসে, তার কাছেই কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর, সে কারণে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দিয়েছি। প্রভাবটাও হয়েছে সে রকমই।
প্রথম আলো: ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব সম্পর্কে বুঝিয়ে বলবেন?
মো. আজিজুর রহমান: ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র যখন ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার সাগরের ভেতরে থাকে, তখন তার অগ্রভাগের প্রভাবটা উপকূলে আঘাত করে। সেটা আজ ভোররাত থেকে শুরু হয়। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। রাতে টেকনাফে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা অগ্রভাগের প্রভাব। ঘূর্ণিঝড়ের ৫০ ভাগ ভূমিতে উঠে গেলে এর কেন্দ্র ভূমিতে স্পর্শ করে।
প্রথম আলো: ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ব্যাস ৭৪ কিলোমিটারের কথা বলেছেন। কেন্দ্র কোন দিক দিয়ে গেছে?
মো. আজিজুর রহমান: ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র গেছে মিয়ানমারের সিটুয়ে অঞ্চল দিয়ে। যেহেতু ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ব্যাস ৭৪ কিলোমিটার ছিল, ওখান থেকে (সিটুয়ে অঞ্চল) সেন্ট মার্টিনের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। যার জন্য সিটুয়ে দিয়ে অতিক্রম করলেও এটির কেন্দ্রের ব্যাস সেন্ট মার্টিনও পেয়েছে। মানে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের একাংশ গেছে সেন্ট মার্টিনের ওপর দিয়ে।
প্রথম আলো: পূর্বাভাসে জলোচ্ছ্বাসের কথা বলা হয়েছিল। এ বিষয়ে কী বলবেন?
মো. আজিজুর রহমান: ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করেছে দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে। এই সময় সাগরে পুরো ভাটা ছিল। টেকনাফে খোঁজ নিয়েছি, জলোচ্ছ্বাস না হলেও বিকেল ৪টার সময় জোয়ারের উচ্চতা বেশি ছিল।
প্রথম আলো: ঘূর্ণিঝড় চলে যাওয়ার পর বৃষ্টি হবে?
মো. আজিজুর রহমান: আগামী দুই-তিন দিন বৃষ্টিপাত হবে। যেহেতু সাগর পরিষ্কার হয়ে গেছে, আর্দ্রতা ভূমিতে প্রবেশ করবে। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হবে।
প্রথম আলো: ঢাকায় বৃষ্টি হবে?
মো. আজিজুর রহমান: ঢাকায়ও বৃষ্টিপাত হবে, তবে বিক্ষিপ্তভাবে হবে। তবে ঢাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট—মূলত এই তিন বিভাগে বৃষ্টিপাত বেশি হবে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে একটু কম বৃষ্টি হবে।
প্রথম আলো: ভূমিধসের আশঙ্কা আছে?
মো. আজিজুর রহমান: নেই। ভারী বৃষ্টিপাত ততটা চট্টগ্রামে হবে না। ভারী বৃষ্টিপাত হবে সিলেট, সুনামগঞ্জ—এ দিকটায়।
প্রথম আলো: চলতি মাসে কি আরও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস আছে?
মো. আজিজুর রহমান: চলতি মাসে এক থেকে দুটি লঘুচাপ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলাম। তার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিল। যেহেতু এখনো চলতি মাসের ১৬ দিন বাকি আছে, এর মধ্যে আরেকটি লঘুচাপ হতেও পারে। কিন্তু আগামী ১০-১২ দিনে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, এই ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম হওয়ার পর ১০-১২ দিন এ ধরনের লঘুচাপ গঠনের সম্ভাবনা কম থাকে। এখন সাগর দুর্বল হয়ে গেছে। শক্তি নেই তত। সুতরাং আবার উত্তপ্ত হতে একটু সময় লাগবে।