ছাত্র–জনতার আন্দোলন: মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, এখন পর্যন্ত ৭৫৭
গুলি, সংঘাত ও সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার্থী, নারী, শিশু, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়া আরও একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম মো. সুমন মিয়া। তিনি নরসিংদীর মাধবদী এলাকার একটি মাদ্রাসায় পড়তেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে সুমন নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। আন্দোলন চলাকালে গত ২০ জুলাই মাধবদী এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর পেটে গুলি লেগেছিল। সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকায় আনা হয়। এক মাসের বেশি সময় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গুলি, সংঘর্ষ ও বিভিন্ন ধরনের সহিংসতায় গত ১৬ জুলাই থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে কমপক্ষে ৭৫৭ জনের মৃত্যু হলো। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার্থী, নারী, শিশু, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ ঘটনাস্থলে, আবার কেউ চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে হাসপাতালে মারা গেছেন।
ঢাকার ১৩টি হাসপাতাল, ঢাকার বাইরের ১৪টি হাসপাতাল এবং নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তিদের সূত্রে সংঘর্ষ-সংঘাতে এসব মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬৯ জনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে গতকাল পর্যন্ত অজ্ঞাতপরিচয় ৮ জনের লাশ ছিল। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার কারণে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি আরও ১৫৭ জনের।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ ও পরবর্তী সহিংসতায় কমপক্ষে ৬৫০ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও অস্থিরতা বিষয়ে প্রাথমিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন ১৬ আগস্ট জেনেভা থেকে প্রকাশিত হয়।
নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির একটি কারণ হলো ঘটনাস্থল থেকে অনেকের মরদেহ হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। আবার অনেক ক্ষেত্রে স্বজনেরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই ঘটনাস্থল থেকে লাশ নিয়ে যান এবং নিজ এলাকায় দাফন করেন। যে কারণে অনেক ঘটনা শুরুর দিকে মৃত্যুর হিসাবে আসেনি। এখনো মৃত্যুর অনেক তথ্য জানা যায়নি। অন্যদিকে আহত অনেকের মৃত্যু হচ্ছে হাসপাতালে।
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রাণহানি, ঘটনার গতিপ্রকৃতি ও ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়কালকে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একটি হচ্ছে ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট এবং অন্যটি ৪ আগস্ট থেকে পরবর্তী সময়কাল (২০ আগস্ট পর্যন্ত)। প্রথম পর্যায়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং দ্বিতীয় পর্যায়কে বলা যায়, সরকার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন।
প্রথম পর্যায়ের (১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট) প্রাণহানির চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবি আদায়ের আন্দোলন দমাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একপর্যায়ে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ শুরু করে। ১৬ জুলাই ৪ শিক্ষার্থীসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়। এরপর ১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের পাশাপাশি প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারের ফলে ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতায় আরও ৩০৫ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ৩ আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও ৩০ জনের।
দ্বিতীয় পর্যায়ের (৪ আগস্ট ও পরবর্তী সময়কাল) প্রাণহানির চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৪ আগস্ট এক দিনেই সারা দেশে সংঘর্ষ–সংঘাতে ১১৬ জনের মৃত্যু হয়। ওই দিন আন্দোলনকারীদের দমাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে প্রকাশ্যে প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়।
পরদিন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ওই দিন এবং তার পরের দিন সারা দেশে ব্যাপক সংঘাত ও সংঘর্ষ হয়। এই দুই দিনে (৫–৬ আগস্ট) অন্তত ২৬৫ জনের মৃত্যু হয়। অর্থাৎ সরকার পতনের আগের দিন (৪ আগস্ট), সরকার পতনের দিন (৫ আগস্ট) এবং সরকার পতনের পরদিন (৬ আগস্ট), এই তিন দিনে ৩৮১ জনের মৃত্যু হয়। সংঘর্ষ–সংঘাতে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৩৫ জনের মৃত্যু হয়।
প্রথম পর্যায়ে ঢাকায়, দ্বিতীয় পর্যায়ে ঢাকার বাইরে মৃত্যু বেশি
মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে (১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট) ঢাকায় মৃত্যু বেশি হয়েছে। এ সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মৃত্যু হয় ২৪৬ জনের। একই সময়ে রাজধানীর বাইরে নিহত হন কমপক্ষে ৯৫ জন।
প্রথম পর্যায়ে (১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট) ঢাকার যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরা ও বাড্ডা এলাকায় মৃত্যু বেশি হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে ৪৬ জন, উত্তরায় ৩১ জন, মিরপুরে ২৯ জন, মোহাম্মদপুরে ২১ জনের মৃত্যু হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে (৩ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে) মৃত্যুর তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়ে ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে মৃত্যুর ঘটনা বেশি। ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে ১২৬ জনের। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ২৯০ জনের। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৮৮ জন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী। সরকার পতনের ওপর দেশের অনেক এলাকায় বিক্ষুব্ধ মানুষ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও তাঁদের বাড়িঘরে হামলা–ভাঙচুর–অগ্নিসংযোগ করেছে।
অন্যদিকে কোটা সংস্কার এবং সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের বিএনপির অন্তত ১৫ নেতা–কর্মী এবং ছাত্রশিবিরের একজন নেতার মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থক মিলে ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একইভাবে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাঁদের অন্তত ৮৭ জন নেতা-কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে রাজনৈতিক রূপ না দিতে নেতা-কর্মীদের মৃত্যুর তথ্য তাঁরা গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। তা ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরোধ বা ভুল–বোঝাবুঝি এড়াতেই এমন কৌশল নেওয়া হয়েছিল। যদিও শুরু থেকেই আন্দোলনটি ছিল ছাত্রদের, পরে তা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপ নেয় এবং গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।
৯১ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী মৃত্যু হয়েছে ১৮ ও ১৯ জুলাই এবং ৪ আগস্ট। ১৮ জুলাই ২৫ জন, ১৯ জুলাই ২৩ জন এবং ৪ আগস্ট ১৫ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী রয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৯১ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
সংঘর্ষ ও সংঘাত শুরুর প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটনা ঘটে ১৬ জুলাই রংপুরে। সেদিন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে পুলিশ। এ ঘটনার সময় ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের অস্ত্রের মুখে রাজপথে একটি লাঠি নিয়ে দুই হাত উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আবু সাঈদ। তাঁকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে গুলি করতে দেখা গেছে। এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন এবং আন্দোলন আরও তীব্র হয়।
আন্দোলনের সময় পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নানা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণকে খুব কাছ থেকে একের পর এক ছররা গুলি করছে পুলিশ। সেই তরুণকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন আরেক তরুণ। এর পরও পুলিশ গুলি করা বন্ধ করেনি। পরে জানা যায়, ঘটনাটি ঘটেছে ২০ জুলাই, যাত্রাবাড়ী এলাকায়। ওই তরুণের নাম ইমাম হাসান (১৯)। তিনি নারায়ণগঞ্জের সরকারি আদমজী নগর এমডব্লিউ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাঁর বাবা ময়নাল হোসেনও একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
ইমাম হোসেনের মা পারভীন আক্তার প্রথম আলোর কাছে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘পুলিশের ছেলে পুলিশেরই গুলিতে মরল, আমার স্বামী এই প্রতিদান পাইল?’
বেশির ভাগ মৃত্যু গুলিতে
নিহত ব্যক্তিদের আঘাতের ধরন জানতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৩টি হাসপাতালের তথ্য পর্যালোচনা করেছে প্রথম আলো। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের আঘাতের ধরন জানতে অনেকের পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর ৮ জন নিজস্ব প্রতিবেদক ও ৪৯ জন প্রতিনিধি। তাতে দেখা গেছে, নিহত ৭৫৭ জনের মধ্যে কমপক্ষে ৪২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে।
এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত কমপক্ষে ২৭৭ জন এবং ৪ আগস্ট থেকে পরবর্তী সময়ে ১৪৭ জন গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গুলিতে যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৮৯ জন শিশু–কিশোর এবং ৪ জন নারীও রয়েছেন।
আন্দোলনে গুলি করা নিয়ে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের তৎকালীন উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনের সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কথোপকথনের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়েছে। আন্দোলন দমাতে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি তাঁদের কথোপকথনে উঠে এসেছে।
ওই ভিডিওতে পুলিশ কর্মকর্তা ইকবাল হোসাইন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলছিলেন, ‘গুলি করে করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলি করলে মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।’
মন্ত্রীর পাশে তখন ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলম ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যাত্রাবাড়ী অঞ্চলেই গুলিতে মারা গেছেন ৮৬ জন। এমনকি ৫ আগস্ট (সরকার পতনের দিন) যাত্রাবাড়ীতে অন্তত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। যাত্রাবাড়ী অঞ্চলটি পুলিশের ওয়ারী বিভাগের আওতাভুক্ত। পুলিশ কর্মকর্তা তখন ওয়ারী বিভাগেরই ডিসি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যাত্রাবাড়ী অঞ্চলে পুলিশ নির্বিচার গুলি করে বহু মানুষকে হত্যা করেছে। এ কারণে পুলিশের ওপর চরম ক্ষুব্ধ ছিল মানুষ। সেখানে পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন সাতজন। একজন র্যাবের সদস্য ও একজন আনসার সদস্যেরও মৃত্যু হয়েছে যাত্রাবাড়ীতে। এমনকি পুলিশের এক সদস্যকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখার ঘটনাও ঘটেছিল যাত্রাবাড়ীতে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ১৬ জুলাইয়ের পর সারা দেশে ৪৪ জন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এর বাইরে দুজন আনসার সদস্য, একজন র্যাব সদস্য ও একজন বিজিবি সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।
এই আন্দোলনে ছাত্রী ও নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত ৪২৪ জনের মধ্যে নারী ও শিশু ৮৩ জন। এর বাইরে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের আঘাতে আরও ১০ জন নারী–শিশুর মৃতু্৵ হয়েছে।
ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমাতে গুলিসহ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র এক ব্যক্তির শাসনে পরিণত হয়েছিল। যেকোনো উপায়ে এক ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি মুখ্য হয় দাঁড়িয়েছিল। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের যত মৃত্যুই হোক না কেন, সেটিকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
তানজিম উদ্দিন খান বলেন, আন্দোলন দমাতে আওয়ামী সরকার যে নিপীড়নের আশ্রয় নেয়, হত্যাকাণ্ডের আশ্রয় নেয়, সেটি সবাইকে অনিরাপদ করে তুলেছিল। যখন বেঁচে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, তখন মানুষ মতাদর্শিক বিভেদ থেকে শুরু করে সব ধরনের ভেদাভেদ ভুলে যায়। বেঁচে থাকার সংগ্রাম সবাইকে এক করে দেয়। ছাত্র–জনতার আন্দোলনে এটাই ঘটেছিল। যা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা রেখেছিল। এই আন্দোলনে একই সঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টিও সামনে এসেছে।