চট্টগ্রাম নগরের ৬০ শতাংশ এলাকা ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে
চট্টগ্রাম নগরের ৬০ শতাংশের বেশি এলাকা ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকার ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাতটিই রয়েছে অতিঝুঁকিপূর্ণ তালিকায়। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে আরও ৯টি ওয়ার্ড।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গত বৃহস্পতিবার নগরের ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলোর একটি তালিকা করেছে। মূলত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। রোগীর সংখ্যার ভিত্তিতে কী ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে, তা–ও উল্লেখ করা হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে মশকনিধনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। এর আগে গত ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে ওই সভায় দেশের সিটি করপোরেশনগুলোকে ১০ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয় মন্ত্রণালয় থেকে।
মন্ত্রণালয়ের সভা এবং সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপের নেওয়ার কথা বললেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। চট্টগ্রাম নগরে ডেঙ্গুর রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলছে। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ১২ জনের ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে চলতি মাসে। গত বছরের মতো প্রকট না হলেও সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রামে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৯। এর মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বরেই আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮১ জন। অর্থাৎ এই বছরের মোট রোগীর প্রায় অর্ধেক আক্রান্ত হয়েছেন সেপ্টেম্বর মাসে। একই সঙ্গে মৃত্যুর হারও বেড়েছে। প্রথম আট মাসে যেখানে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে চলতি মাসে মারা গেছেন ৭ জন।
কীটতত্ত্ববিদ ও মহামারি-বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা মৌসুমে সাধারণত ডেঙ্গু বাড়ে, পরে তা কমে আসে। তবে এখন বর্ষার যে ধরন, তাতে মৌসুমের পরে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বেশি বৃষ্টি হয়। আবার বর্ষা-উত্তরকালে চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে ডেঙ্গু বিস্তারের উদাহরণও আছে। তাই নিশ্চিন্ত থাকার কিছু নেই। প্রয়োজনীয় কিছু ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আবারও বাড়তে পারে। কারণ, বর্ষার মূল মৌসুমের পরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার নজির আছে। ঝুঁকিতে ৬১ শতাংশ এলাকা।
চট্টগ্রাম নগরের ৪১টি ওয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ৭টি ওয়ার্ড। এগুলো হচ্ছে জালালাবাদ, পশ্চিম বাকলিয়া, দক্ষিণ বাকলিয়া, পূর্ব বাকলিয়া, আলকরণ, আন্দরকিল্লা ও ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ডের অবস্থান নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, কোতোয়ালী ও বাকলিয়া থানায়।
সেপ্টেম্বরে প্রথম ১৭ দিনে চট্টগ্রাম নগরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২০৭ জন। এর মধ্যে সাতটি ওয়ার্ডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৩৭। অর্থাৎ নগরে মোট আক্রান্ত রোগীর দুই-তৃতীয়াংশ হচ্ছেন এসব এলাকার। অতিঝুঁকিপূর্ণ ছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড রয়েছে ৯ টি। এগুলো হচ্ছে চান্দগাঁও, চকবাজার, দক্ষিণ কাট্টলী, সরাইপাড়া, পাহাড়তলী, উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, উত্তর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ পতেঙ্গা। আর তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড হচ্ছে ৬ টি। আর ১৯টি ওয়ার্ড আপাতত ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার বাইরে। তবে এসব ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় না থাকলেও মশার উৎপাত থেকে রেহাই। পাচ্ছেন না। এখন ডেঙ্গুর মূল মৌসুম হওয়ায় আতঙ্কও বেশি। মশা নিধন এবং আতঙ্ক কমাতে ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম আরও জোরদারের দাবি জানান তাঁরা।
সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. সরফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রতিদিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও ঠিকানা সিটি করপোরেশনের কাছে সরবরাহ করা হয়। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিশ্লেষণ এবং ঠিকানা যাচাই করে ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে বায়েজিদ বোস্তামী, বাকলিয়া ও আন্দরকিল্লা থানা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। নগরের অন্যান্য এলাকার তুলনায় এগুলো অনেক বেশি ঘনবসতি। আর এখানে এডিস লার্ভার ঘনত্বও বেশি। তাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।
এসব এলাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমাতে এক দিন পরপর ওষুধ ছিটানো হচ্ছে বলে জানান মো. সরফুল ইসলাম। তিনি জানান, সাতটি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৫০ জনের দল গঠন করে ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও ৩০ জন করে সদস্য যুক্ত হবেন।