মেয়ের অস্ত্রোপচারের টাকা পুড়েছে আগুনে, পুড়েছে আশা
মেয়ে অর্পিতা দাসের বন্দর হাসপাতালে কয়েক দিন ধরে চিকিৎসা চলছে। তার একটা অস্ত্রোপচার হবে। মেয়েটাকে সুস্থ করে তোলার প্রাণান্ত চেষ্টা স্বামীহারা সুগন্ধা দাসের। ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে রেখেছিলেন আলমারিতে। কিন্তু আজ সোমবার মুহূর্তের আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে পুড়েছে মেয়ে সুস্থ করে তোলার আশাও।
নগরের ফিরিঙ্গীবাজার টেকপাড়ায় (জেলেপাড়া) আজ বেলা ১টা ২০ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সুগন্ধা দাস তখন বন্দর হাসপাতালে। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের অস্থায়ী কর্মী। আগুন লাগার খবর পেয়ে মুহূর্তেই মা-মেয়ে ছুটে আসেন টেকপাড়ায়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
হাতে ক্যানুলা লাগানো অর্পিতা দাস মাকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। কে কাকে সান্ত্বনা দেবে। তাঁদের কান্না যেন ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা হয়ে ঝরছিল। সুগন্ধার এক ছেলে ও এক মেয়ে। স্বামী ২০১৭ সালে মারা যান। তিনি বন্দরে চাকরি করতেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর অস্থায়ী কর্মী হিসেবে চাকরি নেন সুগন্ধা। অর্পিতা নবম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে চমক বোনের চেয়ে দুই বছরের বড়। সে কিছু করে না।
সুগন্ধা বলেন, ‘মেয়েটা অসুস্থ। কয়েক দিন ধরে বন্দর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসক বলেছেন, তার পেটে টিউমার অপারেশন করতে হবে। এ জন্য ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে ঘরে রেখেছিলাম। কিন্তু আগুন লেগে সব পুড়ে গেছে। এখন আমার মেয়ের চিকিৎসা কীভাবে হবে জানি না।’
সুগন্ধারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। টিনশেড কাঁচা ঘরে থাকতেন তাঁরা। সুগন্ধাদের ঘরের পাশের একটি বৈদ্যুতিক খাম্বা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ফায়ার সার্ভিস জানায়। টেকপাড়ার দুপুরের আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি গাড়ি অংশ নেয়। আগুন পুরোপুরি নেভে বিকেল চারটায়। আগুনের ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ। তবে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদের দাবি ২০০ ঘর পুড়েছে।
সেখানকার বাসিন্দা শিল্পী দাস ও বিরোজিত দাস রাস্তার ওপর বসে কাঁদছিলেন। শিল্পীর দুই মেয়ে। সিটি করপোরেশনের সেবিকার কাজ করেন তিনি। আগুন লাগার পর এসে দেখেন পোড়া ভিটা থেকে ধোঁয়া উঠছে। তাঁর দুই ভরি সোনা ও ৪০ হাজার টাকা পুড়ে গেছে বলে জানান শিল্পী।
বিরোজিত মাছ ধরার ট্রলারের চালক। মেয়ের বিয়ের জন্য অনেক কষ্টে জমা করা কিছু টাকা আলমারিতে রেখেছিলেন বলে জানান বিরোজিত। হাতে আলমারির চাবি নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, কোনোভাবে পোড়া আলমারি খুলতে পারছি না। ওখানে ছিল এক লাখ টাকা।
এই টেকপাড়ায় প্রায় এক দশক আগেও একবার আগুন লেগেছিল। ওই ঘটনারও সাক্ষী বিরোজিত। তিনি এখনো ওই টেকপাড়ায় ভাড়া থাকেন। ‘আগেও আগুন লেগেছিল। তখনো আমার জিনিসপত্র পুড়ে গিয়েছিল। এখন আবার সব শেষ’, বলেন বিরোজিত।
ঘরের পোড়া ফ্রিজ, চেয়ার–টেবিল টেনে টেনে বের করছিলেন সাফিয়া। বাসাবাড়িতে কাজ করেন তিনি। স্বামী সোলায়মান রিকশা চালান। বাড়ি ময়মনসিংহে। দুই সন্তানকে নিয়ে ঈদে বাড়িতে গিয়েছিলেন। আজ সকালে বাড়ি থেকে ফিরে কাজে গিয়েছিলেন সাফিয়া। আর তখনই আগুনের খবর পান তিনি।
বিকেলে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। সে সময় প্রতিটি পরিবারকে তিন হাজার করে টাকা এবং লুঙ্গি ও শাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
আগুন নিভে গেছে অনেকক্ষণ আগে। মেয়রও চলে যান। তখনো তপ্ত হয়ে ছিল পোড়া ভিটা। আর ভিটার কালো ছাইয়ে হন্যে হয়ে আধা পোড়া জিনিসপত্র খুঁজছিলেন বাসিন্দারা। যদি মিলে যায় অক্ষত টাকাপয়সা বা সোনাদানা।