যৌন হয়রানির ঘটনা শিক্ষা পরিস্থিতি নাজুক করেছে: সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি
দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে ঘটে যাওয়া নারী শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন হয়রানির ক্রমবর্ধমান ঘটনা শিক্ষা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে বলে মনে করে নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়নবিষয়ক ৬৬টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। এই কমিটি বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত, উদ্বেগজনক ঘটনায় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিফলন ঘটেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি এসব বিষয় তুলে ধরেছে। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক (নারী অধিকার ও লিঙ্গভিত্তিক সমতা) মরিয়ম নেছা।
সহপাঠী ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে ১৫ মার্চ রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা আত্মহত্যা করেন। সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও যৌন উত্ত্যক্তকরণের সাম্প্রতিক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, এসব ঘটনার হোতা শুধু পুরুষ শিক্ষার্থীরা নন, শিক্ষাদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কতিপয় শিক্ষকও রয়েছেন।
মরিয়ম নেছা বলেন, নিরাপত্তার অভাব, নানা ধরনের অন্যায় আচরণ এবং হুমকি-ভয়-ভীতির কারণে অনেক নারী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছেন। প্রচণ্ড মানসিক চাপ আর অসহায়ত্ব কাউকে কাউকে আত্মহননের দিকে যেতে বাধ্য করে। এই পরিস্থিতিতে কেউ দায়বদ্ধতার ঊর্ধ্বে নয়। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, কর্তৃপক্ষ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব অগ্রগণ্য।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, এটা (ফাইরুজ অবন্তিকা প্রসঙ্গে) কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত কয়েক দিনে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭টি যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ১৪টি পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে মহিলা পরিষদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৭ জন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
কর্মজীবী নারীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শিরীন আখতার বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম আরও ঘটনা আগেও ঘটেছে। কিন্তু সেসব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার সাহস ছাত্রীদের ছিল না। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের নিপীড়নের কার্যক্রম প্রচলিত আছে। যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই জোরালো করা দরকার।
কতিপয় দুষ্কৃতকারীর কারণে নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী। তিনি বলেন, অনেকে আত্মহননের পথে চলে যাচ্ছেন। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে অভিযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা এবং কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি চাকরিজীবীদের মতো অন্যরাও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী। তিনি বলেন, অনেকে চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে অভিযোগ করেন না। আবার পরিবার থেকেও অনেকে সহযোগিতা পান না।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি, জাতীয় নারী জোটের প্রতিনিধি, মহিলা পরিষদের নেত্রীরা এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে যৌন হয়রানি ও যৌন নিপীড়ন রোধে ২৩টি সুপারিশ তুলে ধরে এই কমিটি। এর মধ্যে রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি রোধে কমিটি গঠন ও কার্যক্রম পরিচালনা করা, এটি যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ তা প্রচার করা, এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতি সংবেদনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারকে যৌথভাবে সক্রিয় হওয়া প্রভৃতি।