ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম
হেলিকপ্টার থেকে গুলির প্রমাণ, সাবেক র্যাব মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গণ–অভ্যুত্থানের সময় র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের প্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, এ ঘটনায় র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ‘কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ রোববার এই পরোয়ানা জারি করেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন মঞ্জুর করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, গণ-অভ্যুত্থানে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার প্রমাণ পেয়েছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এই মূল কাজটা করেছেন র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ।
তাজুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে আজ গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। ট্রাইব্যুনাল সেই আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আগামী ২৩ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। হারুন অর রশিদ এখন কোথায় আছেন, তা জানে না চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, ছাত্র–জনতাকে গুলি করে হত্যা, নির্যাতন করা এবং হেলিকপ্টার ব্যবহার করে ছাত্র–জনতাকে নির্মূল করার পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন করেছিলেন হারুন অর রশিদ। তাঁর অধীন কর্মকর্তারাও এতে জড়িত ছিলেন। গণ–অভ্যুত্থানের সময় আটক করা, নির্যাতন করার অভিযোগও আনা হয়েছে হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখন পর্যন্ত ৯৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, যাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই পুলিশ সদস্য। এরপর রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য ও দলীয় নেতারা। এ ছাড়া অন্যান্য বাহিনীর অল্প কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৫–৪০ জনকে ট্রাইব্যুনালের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তাজুল ইসলাম।
গণ–অভ্যুত্থানে পুলিশ বাহিনী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তাঁদের অধিকাংশই পালিয়ে গিয়েছিলেন। কারণ, মোটাদাগে অপরাধের সঙ্গে তাঁদের বেশির ভাগের সম্পৃক্ততা ছিল। ভেঙে পড়া পুলিশ প্রশাসনের কারণেই হয়তো প্রথম দিকের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা যায়নি। তবে তারা একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে। নিশ্চয়ই এখন তারা বাকি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় গণ–অভ্যুত্থানের সময় লাশ পোড়ানোর মামলায় পুলিশের উপপরিদর্শক মালেক ও কনস্টেবল মুকুল চোকদারকে এক দিন করে জিজ্ঞাবাদের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২৮ জানুয়ারি মুকুলকে এবং ৩০ জানুয়ারি মালেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।