তুলে নেওয়ার ছয় দিনের মাথায় আজ সোমবার কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান। আজ সন্ধ্যা ছয়টার পর কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। এ সময় তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। কারা ফটকেই এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা শামসুজ্জামানের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চান।
শামসুজ্জামান এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই আমি একটু বিধ্বস্ত ছিলাম, মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত ছিলাম। আমার মনে হয় যে সে জায়গা থেকে আমি বের হয়ে এসেছি। এখন তো ভালো লাগছে সব মিলিয়ে।’
এ সময় মুক্তির পর অনুভূতি জানতে চাইলে শামসুজ্জামান বলেন, ‘আমার অফিস থেকে শুরু করে দেশের সাংবাদিক সমাজ, আমার ক্যাম্পাসের ছোট ভাইয়েরা, যাঁরা আমার সঙ্গে সব সময় ছিলেন। এটা আমার জন্য আনন্দের বিষয়। এটা আমাকে সব সময় আনন্দ জুগিয়েছে এবং শক্তি জুগিয়েছে। তাঁরা সবাই সত্যের পাশে ছিলেন। আমার ভয়েসটি বাইরে থেকে আমি পেয়েছি, মানুষের মুখ থেকে পেয়েছি। আমার কিছু বলার প্রয়োজন হয়নি।’
এর আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় করা মামলায় জামিন পান শামসুজ্জামান। আজ দুপুরের পর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে দ্বিতীয়বার জামিন আবেদন করেন শামসুজ্জামান। অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছেন।
এরপর শামসুজ্জামানের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। সন্ধ্যার ছয়টার কিছু পর তিনি মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সারা দেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ, তাঁরা আমার পাশে ছিলেন। তাঁরা চেষ্টা করেছেন। সবার প্রতি আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।’
গত বুধবার ভোর চারটার দিকে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের আমবাগান এলাকায় শামসুজ্জামানের বাসায় যান ১৪ থেকে ১৫ জন। নিজেদের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্য পরিচয়ে শামসুজ্জামানের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তাঁর ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুটি মুঠোফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যান। পরে শামসুজ্জামানকে নিয়ে যান তাঁরা।
বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ২০ ঘণ্টার বেশি সময় পর গত শুক্রবার দিবাগত রাতে শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে এই মামলার প্রধান আসামি করা হয়। তিনি গতকাল রোববার এই মামলায় ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন। এই মামলার বাদী আইনজীবী আবদুল মালেক (মশিউর মালেক)। তিনি নিজেকে হাইকোর্টের আইনজীবী পরিচয় দিয়েছেন।
গ্রেপ্তারের পর কোনো ধরনের খারাপ আচরণ করা হয়েছে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে শামসুজ্জামান বলেন, সিআইডি অফিস থেকে কারাগার পর্যন্ত সব জায়গায় পজিটিভ (ইতিবাচক) অ্যাপ্রোচ পেয়েছেন।
আজ সাংবাদিকেরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ নিয়ে শামসুজ্জামানের কাছে জানতে চান। এর জবাবে শামসুজ্জমান বলেন, ‘এ নিয়ে আমি নানা আলোচনা দেখছি। আমি ছোট একটা মানুষ। সবাই বলছে, এটাকে স্থগিত করা দরকার। সম্মিলিত সবার মতামত নিয়ে এটাকে সুন্দরভাবে করা। বর্তমানে এটাকে স্থগিত করা উচিত। যাঁরা বয়োজ্যেষ্ঠ আছেন, অভিজ্ঞ যাঁরা আছেন, তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সুন্দরভাবে এটা করা উচিত, যাতে সবাই একে গ্রহণ করতে পারেন।’
২৬ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে প্রকাশের সময় দিনমজুর জাকির হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘ফটোকার্ড’ তৈরি করা হয়। সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ছবি দেওয়া হয় একটি শিশুর। পোস্ট দেওয়ার পর অসংগতি নজরে আসে এবং দ্রুত তা প্রত্যাহার করা হয়।
পাশাপাশি প্রতিবেদন সংশোধন করে সংশোধনীর বিষয়টি উল্লেখসহ পরে আবার অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি যে উক্তিটি ওই শিশুর; বরং স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, উক্তিটি দিনমজুর জাকির হোসেনের।
এ ঘটনার জেরে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, থানায় নথিভুক্ত হওয়া এজাহার অনুযায়ী মামলাটি হয়েছে। বাদীর পরিচয় লেখা হয়েছে, তিনি ঢাকার কল্যাণপুরের বাসিন্দা। তাঁর ফেসবুক পেজের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। তিনি আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।