কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের এক নেতাকে পিটিয়ে প্রক্টরের কাছে সোপর্দ করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। আজ বুধবার বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের ওই নেতার নাম ধ্রুব বড়ুয়া। তিনি ওই সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ধ্রুব বড়ুয়াকে প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ অহিদুল আলমের হাতে তুলে দেন। পরে প্রক্টর তাঁর মুঠোফোন এবং মুঠোফোনের পাসওয়ার্ড রেখে ওই নেতাকে ছেড়ে দেন।
ধ্রুব বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ২ নম্বর গেট এলাকাতেই থাকেন। বেলা দুইটার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের দিকে আসতেই ছাত্রলীগের দুই কর্মী তাঁর পথ আটকান। ওই দুই কর্মী প্রথমে তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। তিনি বাধা দিলে তাঁকে একদফা মারধর করেন। মুহূর্তের মধ্যে ছাত্রলীগের ২০-৩০ জন সেখানে উপস্থিত হন। তাঁরা এসে গালাগাল দিয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলন সম্পর্কে বিভিন্ন স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেন।
ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের এমন মারমুখী আচরণের কারণে তিনি স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হন। তাঁদের কথামতো ‘আন্দোলন শুরুতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছিল, এখন সেখানে জামায়াত-শিবির-ছাত্রদল চলে এসেছে। এই আন্দোলন এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ লাভ করেছে। তাই আমি এই আন্দোলন বয়কট করছি।’ তিনি এসব কথা বলেছেন।
স্বীকারোক্তি দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই প্রক্টর সেখানে উপস্থিত হন। পরে প্রক্টর ছাত্রলীগের কাছ থেকে তাঁর মুঠোফোন উদ্ধার করেন। ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, মুঠোফোন উদ্ধার করা হলেও প্রক্টর সেটি আর তাঁকে ফেরত দেননি। উল্টো ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়ে নেন। পরে প্রক্টর তাঁকে দুই দিন পরে আসতে বলেন।
ধ্রুব বড়ুয়াকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও কনকর্ড উপপক্ষের নেতা আবরার শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকজন জুনিয়র ধ্রুব বড়ুয়াকে আটক করেছিল। পরে তিনি তাঁকে উদ্ধার করেছেন। তিনি বাকিদের বুঝিয়েছেন, তাঁদের অবস্থান জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে; আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নয়। পরে তারা ধ্রুবকে ছেড়ে দিয়েছে। নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁকে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে তাঁরা হস্তান্তর করেছেন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অহিদুল আলম বলেন, মারধরের বিষয়টি তিনি জানেন না। শিক্ষার্থীরা ধ্রুবর বিরুদ্ধে গুজব রটানোর অভিযোগ করেছিলেন। এ কারণে তাঁর মুঠোফোন রাখা হয়েছে। পরে ফোন ঘেঁটে দেখে এটি ফেরত দেওয়া হবে।
একজন প্রক্টর এভাবে কোনো শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত মুঠোফোন ঘেঁটে দেখতে পারেন কি না জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, ‘অভিযোগ থাকরে পারে।’