‘বিএনপির লোক’ পরিচয়ে ঘাট দখল, সি-ট্রাক চলাচলে বাধা
নোয়াখালীর হাতিয়ায় ‘বিএনপির লোক’ পরিচয় দিয়ে ঘাট দখলের পর সি-ট্রাকে যাত্রী পারাপারে দফায় দফায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার ও আগের দিন মঙ্গলবার হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাট থেকে সি-ট্রাক যাত্রী নিয়ে হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে যেতে পারেনি। আজ বৃহস্পতিবার সকালেও যাত্রীদের সি-ট্রাকে উঠতে বাধা দেয় ওই চক্র। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে যাত্রীরা। পরে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যাত্রীদের সি-ট্রাকে যাতায়াতে সহায়তা করে।
এর আগে গত মঙ্গলবার সি-ট্রাকের চার্টার এজেন্ট গোলাম মাওলার পক্ষ থেকে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন এ নিয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণে প্রতিদিনই সি-ট্রাকে যাত্রী পরিবহনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া ও কাউন্টার থেকে টিকিট ছিনিয়ে নেওয়ার কারণে মঙ্গলবার ও গতকাল সি-ট্রাক চলাচল করতে পারেনি।
চেয়ারম্যানঘাটের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর হাতিয়ার বয়ারচর এলাকার কয়েকজন লোক নিজেদের বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত দাবি করে চেয়ারম্যানঘাট দখল করেন। ঘাটের স্পিডবোট, ট্রলার ও সি-ট্রাক চলাচল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন তাঁরা। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় সি-ট্রাকের চার্টার এজেন্টের। যার জের ধরে সি-ট্রাক চলাচলে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বাসিন্দারা জানান, গতকাল সকালে চেয়ারম্যানঘাটের টিকিট কাউন্টার থেকে সব টিকিট ছিনিয়ে নেয় ঘাট দখলকারী চক্রটি। এতে শেষ পর্যন্ত সি-ট্রাকটি আর হাতিয়ার নলচিরার উদ্দেশে ছেড়ে যেতে পারেনি। এর ফলে হাতিয়ায় যাওয়ার জন্য ঘাটে যাওয়া ব্যক্তিরা বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ স্পিডবোট ও ট্রলারে চড়ে নদী পার হয়ে নলচিরা ঘাটে যান। অবৈধ ওই সব স্পিডবোট ও ট্রলারের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন যাঁরা সি-ট্রাক চলাচলে বাধা দিচ্ছেন, তাঁরাই।
সি-ট্রাকের এজেন্ট গোলাম মাওলা অভিযোগ করেন, তিনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউএ) যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে দরপত্রের মাধ্যমে গত ৩১ জুলাই থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য হাতিয়ার নলচিরা লঞ্চঘাটের ইজারা নেন। একইভাবে গত ১২ জুন বয়ারচর (চেয়ারম্যানঘাট) ও হাতিয়া (নলচিরা) নৌ রুটে সি-ট্রাক চালনায় তিন বছরের জন্য বিআইডব্লিউটিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী তিনি সরকারি কোষাগারে প্রয়োজনীয় অর্থ জমা দিয়ে ঘাট ও সি-ট্রাক পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি নিজেদের বিএনপির লোক পরিচয় দিয়ে তাঁদের লোকজনের মাধ্যমে ঘাটের দখল নেন। এতে তিনি বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
গোলাম মাওলার অভিযোগ, যাঁরা সি-ট্রাক চলাচলে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের কয়েকজনের নাম তিনি জানতে পেরেছেন। তাঁরা হলেন মো. কাঞ্চন, মো. ইরাক, জামসেদ ও জামাল। তাঁরা সবাই স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
অভিযুক্ত কাঞ্চনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি প্রথমে দাবি করেন, সি-ট্রাক চলাচল করে কি না, তা তিনি জানেন না। পরে আবার বলেন, ‘সি-ট্রাকের এজেন্ট গোলাম মাওলা একজন সন্ত্রাসী। তাই আমি ১০ শতাংশ বেশি টাকা দিয়ে সি-ট্রাকের এজেন্ট হওয়ার জন্য দরখাস্ত করে রেখেছি।’
হরণী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি যত দূর জানেন, সি-ট্রাকের ইজারা বাতিল করে নতুন ইজারাদার (চার্টার এজেন্ট) নিয়োগ করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তা ছাড়া ঘাটে সি-ট্রাকে যাত্রী পারাপারে কেউ বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু সি-ট্রাকের লোকজন সরকারি নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার করছেন। এ নিয়ে হয়তো কেউ প্রতিবাদ করতে পারেন।
হাতিয়ার ইউএনও মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সি-ট্রাকে যাত্রী পরিবহনে বাধা প্রদানের অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর গতকাল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং এছেন নলচিরা ঘাটে অভিযান পরিচালনা করেন। তখন ঘাটে কাউকে পাওয়া যায়নি। আজ সকালে চেয়ারম্যানঘাটে পুলিশ পাঠিয়েছেন। পরে সি-ট্রাক চলাচল করছে।