দুর্নীতির অভিযোগে বদলি, বরখাস্ত ও অবসর যথেষ্ট নয়: টিআইবি

দুর্নীতির অভিযোগে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বদলি, বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসরসহ কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়, বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা দুর্নীতিকে উৎসাহ দেয় বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি বলছে, দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদেরও বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও পুলিশের কোনো কোনো কর্মকর্তাকে বদলি বা বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে, যা বিভাগীয় পদক্ষেপ হিসেবে আশাব্যঞ্জক প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে টিআইবি।

বিভিন্ন সময়ে সংশোধনের মাধ্যমে বিদ্যমান সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা শিথিল করে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের একধরনের সুরক্ষা কবচ দেওয়া হয়েছে বলেও মনে করে টিআইবি।

দুর্নীতির জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দায় শেষ করা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন উল্লেখ করে টিআইবি বলছে, সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের শাস্তি শুধু বদলি, বরখাস্ত ও অবসর প্রদানে সীমাবদ্ধ রাখা অন্য সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের পরিচায়ক। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদেরও অন্য সবার মতো দেশের প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত ও বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই তাঁকে বদলি করা, বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের মতো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাকেই স্বাভাবিকতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্নীতির জন্য কার্যকর জবাবদিহি ও প্রতিরোধের সম্ভাবনার মানদণ্ডে যা একেবারেই যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, দুর্নীতির মতো অপরাধ বদলির মাধ্যমে আরও বেশি প্রসারিত এবং অন্যান্য কর্মচারীর মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাও সৃষ্টি করে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী দুর্নীতি করলে দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না—এমন ধারণা প্রসারের মাধ্যমে তা দুর্নীতিকে অধিকতর উৎসাহ দেয়।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দুর্নীতি প্রকট হওয়ার দায় রাজনৈতিকভাবে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকতার বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের একাংশ স্বীকার করলেও, তাঁদের অনেকেই এই দুর্নীতির দায় ঢালাওভাবে শুধু সরকারি কর্মচারীদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু উচ্চপর্যায়ের এই দুর্নীতি অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও যোগসাজশ ছাড়া সম্ভব নয়।