সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতনকাঠামো নির্ধারণ করে প্রকাশিত নবম ওয়েজ বোর্ডের গেজেটের দ্বাদশ অধ্যায়ে থাকা মন্ত্রিসভা কমিটির দুটি সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এই লিভ টু আপিলে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) বক্তব্য শুনবেন সর্বোচ্চ আদালত।
এ জন্য নোয়াব কর্তৃপক্ষের প্রতি নোটিশ ইস্যু করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালত বলেছেন, এই ইস্যুতে তাঁরা আইনজীবীর মাধ্যমে উপস্থিত হয়ে আদালতকে সহযোগিতা করবেন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আজ রোববার এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে লিভ টু আপিলের শুনানি আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
সুপারিশে আয়কর সংবাদকর্মীদের নিজেদের প্রদান করা ও কর্মী এক মাসের গ্র্যাচুইটি পাবেন বলে উল্লেখ রয়েছে। মন্ত্রিসভা কমিটির দুটি সুপারিশের বৈধতা নিয়ে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর রায় দেন। রায়ে ওই দুটি সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছর পৃথক লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আগের ধারাবাহিকতায় আজ পৃথক লিভ টু আপিল শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন।
শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, হাইকোর্ট নবম ওয়েজ বোর্ডে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন। আয় করযোগ্য, তবে কে আয়কর প্রদান করবেন, তা রায়ে আসেনি। তাহলে আয়কর কে দেবেন, এ জন্য লিভ টু আপিল করা হয়েছে। আদালত বলেন, আগে কে দিত? তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, চতুর্থ ওয়েজ বোর্ড নিয়ে মামলার রায়ের পর মালিকপক্ষ দিত।
শুনানিতে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন বলেন, চতুর্থ ওয়েজ বোর্ড নিয়ে আপিল বিভাগের রায়ে কর্মীর আয়কর মালিক দেবেন বলা হয়েছে। এর পর থেকে অষ্টম ওয়েজ বোর্ড পর্যন্ত মালিকপক্ষ দিয়ে এসেছে। ফ্রিঞ্জ বেনিফিট (ভাতাদি ও প্রান্তিক সুযোগ-সুবিধা) হিসেবে মালিকপক্ষ এটি দেয়। নবম ওয়েজ বোর্ডে মন্ত্রিসভার সুপারিশ বাতিল হওয়ায় আগের নিয়ম বহাল হয়েছে। শ্রম আইন অনুসারে কাউকে দীর্ঘদিন ধরে কোনো সুবিধা দিলে তা কেড়ে নেওয়া যায়।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, আপিল বিভাগ পৃথক লিভ টু আপিলের শুনানি মুলতবি করেছেন। নোয়াবের প্রতি নোটিশ ইস্যু করেছেন, যাতে নোয়াব সভাপতি বা তাঁরা তাঁদের আইনজীবীর মাধ্যমে উপস্থিত হয়ে আদালতে বক্তব্য দিতে পারেন। শুনানির জন্য আগামী ২১ এপ্রিল বিষয়টি আসবে।
নবম ওয়েজ বোর্ডের গেজেটের দ্বাদশ অধ্যায়ে উল্লেখিত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশের ভাষ্য, ‘সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীগণের বেতনের উপর আরোপিত আয়কর সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রশাসিনক কর্মচারী কর্তৃক তাদের নিজ নিজ আয় হতে প্রদান করতে হবে।’ অপর দফায় বলা হয়, ‘সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীগণ প্রত্যেক বছরে অথবা তার অংশ বিশেষ ছয় মাস বা এর অধিক সময় চাকরির জন্য সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) হিসেবে প্রাপ্য হবেন।’
সংবাদকর্মীদের জন্য বেতনকাঠামো নির্ধারণ করে ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এর দ্বাদশ অধ্যায়ে কয়েকটি সুপারিশ রয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রিসভা কমিটির ওই দুটি সুপারিশের (আয়কর ও গ্র্যাচুইটি) বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) কর্মচারী ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুজ্জামান ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট মন্ত্রিসভা কমিটির দুটি সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।