অবমাননার দায়ে ২ ঘণ্টার সাজা খাটলেন পাসপোর্টের এক কর্মকর্তা
আদালত অবমাননার দায়ে সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মনিরুজামানকে প্রতীকী সাজা দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রায় দুই ঘণ্টা আদালতে দাঁড়িয়ে থেকে মনিরুজামান ওই সাজা ভোগ করেন।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রায় দেন। তবে এই সাজা তাঁর কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে উল্লেখ করেছেন আদালত।
আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও পাসপোর্ট না দেওয়ার প্রেক্ষাপটে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা এক আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে এ রায় দেওয়া হয়।
রায়ের পর আবেদনকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, সহকারী পরিচালকের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত অবমাননার জন্য বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত আদালত কক্ষে দাঁড়িয়ে থেকে তিনি প্রতীকী ওই শাস্তি ভোগ করেন। ফৌজদারি মামলা চলমান অবস্থায় কাউকে পাসপোর্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা যাবে না বলে রায়ে এসেছে। অতীতেও হাইকোর্ট বিভাগ এ ধরনের রায় দিয়েছেন। ফৌজদারি মামলা চলমান আছে বলে কারও পাসপোর্ট দেওয়া যাবে না—দেশে এমন আইনও নেই।
এর আগে পাসপোর্ট সরবরাহের (ডেলিভারি) তারিখ–সংবলিত স্লিপ দেওয়া সত্ত্বেও পাসপোর্ট না পেয়ে চলতি বছর হাইকোর্টে রিট করেন হুসাইন আহমেদ। তিনি সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার এক বাসিন্দা। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩ মার্চ হাইকোর্ট রুল দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে তাঁকে পাসপোর্ট দিতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের প্রতি নির্দেশ দেন।
নির্দেশনার পরও পাসপোর্ট না পেয়ে মহাপরিচালক ও সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি নিয়ে গত ১৫ মে হাইকোর্ট ওই দুই কর্মকর্তার প্রতি আদালত অবমাননার রুল দেন। পাশাপাশি ব্যাখ্যা জানাতে সহকারী পরিচালক মো. মনিরুজামানকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি আদালতে হাজির হন।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। মহাপরিচালক ও সহকারী পরিচালকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মুনীরুজ্জামান।
আইনজীবী মুনীরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পাসপোর্ট দিতে আদালতের আদেশ পাওয়ার পর গত ৩ এপ্রিল সহকারী পরিচালকের এক চিঠিতে ফৌজদারি মামলা থাকার কারণে পাসপোর্ট দেওয়া যাবে না বলে রিট আবেদনকারীকে জানান। এই চিঠির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সহকারী পরিচালককে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি আদালতে হাজির হন। মহাপরিচালক ও সহকারী পরিচালক দুজন নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আদালতের আদেশ পেয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পাসপোর্টটি ইস্যু করার জন্য পদক্ষেপ নেন। ইতিমধ্যে ওই ব্যক্তি পাসপোর্ট পেয়েছেন। মহাপরিচালকের নিঃশর্ত ক্ষমার প্রার্থনা গ্রহণ করে তাঁকে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সহকারী পরিচালকের গত ৩ এপ্রিলের চিঠিকে আদালত অবমাননা হিসেবে গণ্য করে তাঁকে প্রতীকী শাস্তি দিয়েছেন।