শিক্ষকেরা অ্যাটম বোমার চেয়েও শক্তিশালী। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের যুদ্ধ যখন বিশ্বনেতারা থামাতে পারছিলেন না, তখন ইসরায়েলের এক শিক্ষক ও তাঁর বন্ধু ফিলিস্তিনের সেই যুদ্ধ থামিয়েছেন। তাই শিক্ষকদের সম্মানিত করা প্রয়োজন। শিক্ষকেরা সম্মানিত হলে পুরো জাতি সম্মানিত হয়।
আজ শনিবার বিকেলে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা-২০২২’ উপলক্ষে এই সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে কক্সবাজারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষা আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। পুরো আয়োজনে সহযোগিতা করে প্রথম আলো বন্ধুসভা কক্সবাজার।
কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদা মোর্শেদার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ, কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন, বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. ছৈয়দ করিম, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম, কক্সবাজার মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রমজান আলী, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আবীর আহসান, কক্সবাজার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সত্যপ্রিয় চৌধুরী, চিকিৎসক চন্দন কান্তি দাশ, কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি দীপক শর্মা, কক্সবাজারের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও শহরের উত্তর নুনিয়াছটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফোরকানা বেগম, ২০২১ সালে প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা পাওয়া শিক্ষক মহেশখালী গোরকঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিতালী প্রভা দে প্রমুখ। কক্সবাজার বন্ধুসভার দপ্তর সম্পাদক সাজিয়া আফরিনের সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস ও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আইপিডিসির বিপণন কর্মকর্তা কাজী মাহির।
আইপিডিসির বিপণন কর্মকর্তা কাজী মাহির বলেন, বিগত তিন বছরে কক্সবাজার থেকে মাত্র দুজন শিক্ষক মনোনয়ন পেয়েছেন। এবার আরও বেশি মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, ‘শিক্ষকতা চাকরি বা পেশা না। এটি একটি ব্রত। সন্তান জন্মের পর মা-বাবা ভরণপোষণ করেন। এরপর শিক্ষকেরা তাদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু আত্মিক উন্নয়ন হয়নি। যদি আমরা শিক্ষকতাকে ব্রত হিসেবে দেখতে পারি, তাহলে প্রকৃত শিক্ষক খুঁজে পাব।’
অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, পত্রিকার কাজ সংবাদ পরিবেশন করা। কিন্তু প্রথম আলো শুধু সংবাদ পরিবেশন করেই থেমে থাকে না। তারা বাল্যবিবাহ রোধ, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। নতুন শিক্ষকদের অনেকেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা করছেন। এ প্রতিযোগিতা থেকে সরে এলে মানুষ শিক্ষকদের সম্মান করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম বলেন, আজকে বিশ্বায়নের কারণে অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ঠিক রাখতে গিয়ে শিক্ষকদের সম্মান, শ্রদ্ধা উঠে যাচ্ছে। সমাজের অবক্ষয় রোধে শিক্ষকেরা কাজ না করলে আগামীর বাংলাদেশ থেকে ভালো কিছু আশা করা যাবে না।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আকতার স্যারের ভিডিও দেখে আমার স্যারদের কথা মনে পড়েছে। চোখ ভিজে উঠেছে। শিক্ষক এমনই হওয়া দরকার।’
চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আবীর আহসান বলেন, প্রথম আলো একটি সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান। পত্রিকা প্রকাশের পাশাপাশি জাতি গঠনে ভূমিকা রাখছে প্রথম আলো। শিক্ষকেরা হচ্ছেন জাতি গড়ার কারিগর। তাঁদের সম্মান দেওয়া দরকার। শিক্ষকদের মূল্যায়ন না করলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
শিক্ষক রমজান আলী বলেন, ‘২৪ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। কিন্তু প্রথম আলোর মতো করে কেউ কখনো শিক্ষকদের বড় পরিসরে সম্মাননা দেয়নি। আমরা শ্রেণিকক্ষের কালো বোর্ডে সাদা চকে যা দিই, তা অন্য কেউ দিতে পারে না। আমরা শিক্ষকেরা টাকাপয়সা চাই না, শুধু একটু সম্মান চাই।’
আয়োজনের শুরুতে বড় পর্দায় ‘জার্নি ভিডিও’, ‘মজুমদার স্যার’ ও ‘আকতার স্যার’ শিরোনামে তিনটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। ভিডিওগুলো দেখে অতিথিরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
আয়োজকেরা জানান, অনলাইনে (www.priyoshikkhok.com) নির্ধারিত ফরম পূরণ করে মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে। এ ছাড়া ওই ওয়েবসাইট থেকে পিডিএফ ফরম ডাউনলোড করে তা পূরণের পর ডাকযোগেও মনোনয়ন পাঠানো যাবে। মনোনয়ন কার্যক্রম চলবে আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।