সাংবাদিক সমাজ ও সম্পাদক পরিষদের অনেক দিনের দাবি ছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) যেন পরিবর্তন করা হয়। এই আইন সত্যিকার অর্থে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের একটা বিরাট প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করেছে। দেরিতে হলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের উদ্যোগে আংশিক স্বস্তি প্রকাশ করছি।
তবে ডিএসএর আওতায় বহু সাংবাদিক নির্যাতিত, গ্রেপ্তার ও সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। অনেকে এখনো কারাগারে রয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রীর কথাতে বোঝা গেছে, তাঁরা আইনটাকে আধুনিকীকরণ করছেন। আইনমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। এটার খসড়াও মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন হয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনে মানহানির অপরাধে কোনো কারাদণ্ড থাকবে না, শুধু জরিমানা থাকবে। এখান থেকে প্রশ্ন আসে, যাঁরা এখন মানহানির মামলায় কারাগারে রয়েছেন, তাঁদের কী হবে। কেন তাঁরা কারাগারে থাকবেন—প্রশ্নটা আমরা তুলতে চাই। তাঁরা যেন শিগগিরই ন্যায়বিচার পান। যেহেতু ডিএসএ থাকছে না, তাই তাঁদের কারাগারে রাখার নৈতিক কারণ দেখি না। তাঁদের বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রয়োজন।
আমরা আহ্বান জানাব, যাঁরা মানহানির মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সরকার বিবেচনায় রাখবে।
নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে কী কী আছে, তা আমরা পুরোটা জানি না। সেটা সাংবাদিকবান্ধব কি না, সরকার সত্যি সত্যি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করবে কি না, সেটা না দেখা পর্যন্ত আমরা স্বস্তি প্রকাশ করতে পারছি না।
এখানে একটি অভিজ্ঞতার কথা বলতে হয়, আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি) আইন যখন সরকার প্রবর্তন করে, তখন এটা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বলেছিল, আইনটি পরিবর্তন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আনা হচ্ছে। কিন্তু দেখা গেল, নতুন আইন আগের চেয়ে বেশি কঠোর হলো।
আমরা আশা করব, এবারের নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনের অভিজ্ঞতা যাতে অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়। সত্যিকার অর্থে সাংবাদিকবান্ধব ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবান্ধব একটি আইনি কাঠামো প্রবর্তিত হয়।
নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকার সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে এবং সম্পাদকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে আলাপ করেছে বলে আমাদের জানা নেই।
যেহেতু সাংবাদিকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, আমরা মনে করি, নতুন আইন পাস করার আগে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে এবং সম্পাদকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা করা উচিত।
মাহ্ফুজ আনাম, সভাপতি, সম্পাদক পরিষদ ও সম্পাদক, দ্য ডেইলি স্টার