বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে বিশ্বের আরও কিছু অঞ্চলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, রোগব্যাধি কোনো সীমান্ত মানে না।
রাজধানীর শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে গতকাল সোমবার আয়োজিত এক সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা এ কথা বলেন। ‘এমএসএফ সায়েন্টিফিক ডেজ: এশিয়া ২০২৩’ শিরোনামের সম্মেলন যৌথভাবে আয়োজন করে সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল (মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স বা এমএসএফ) ও বিএসএমএমইউ। অনুষ্ঠানে বলা হয়, এমএসএফ এ ধরনের অনুষ্ঠান এর আগে বাংলাদেশে করেনি।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এমএসএফ দক্ষিণ এশিয়া অংশের নির্বাহী পরিচালক ফারহাত মনটো বলেন, ‘বিশ্বের যেখানে উপেক্ষিত রোগ, অবহেলিত রোগী আছে, আমরা সেখানেই কাজ করি।’ তিনি আরও বলেন, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে চিকিৎসা বিষয়ে কোনো ভুল তথ্য বা গুজব ছড়ালে এমএসএফ তা বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে মোকাবিলা করে, মানুষকে সচেতন করে।
একই অধিবেশনে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এমএসএফ শুধু চিকিৎসা দিচ্ছে না, তারা মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। বিএসএমএমইউর সঙ্গে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তিনি নোবেলে শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আন্তর্জাতিক সংগঠনটিকে কৃতজ্ঞতা জানান।
গতকাল সারা দিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ পৃথক নয়টি অধিবেশন হয়। একাধিক অধিবেশনে বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের অবহেলিত রোগবিষয়ক অধিবেশনের শুরুতে বলা হয়, গত ২২ বছরে ডেঙ্গুতে বাংলাদেশে যত মৃত্যু হয়েছে, শুধু ২০২৩ সালে তার চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে।
বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কিছু নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ডেঙ্গু গ্রামাঞ্চলেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। ডেঙ্গু মোকাবিলার কাজে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে।
অবহেলিত রোগের ওষুধ নিয়ে গবেষণাকারী অলাভজনক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ডিএনডিআইর গবেষক বায়রন আরানা একই অধিবেশনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, কিছু কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব দক্ষিণ আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে কমে আসছে, অন্যদিকে ইউরোপ ও আফ্রিকায় বাড়ছে। এই তালিকায় ডেঙ্গু আছে।
প্রথম অধিবেশনে সম্মেলনের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী। তিনি বলেন, প্রায় ২০০ বছরের সমস্যা কলেরা। ব্যাপকভাবে কলেরার টিকার ব্যবহার শুরু হলে কলেরা কমে আসবে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে টাইফয়েড সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে।
বিকেলে হেপাটাইটিসবিষয়ক অধিবেশনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার উপ-কর্মসূচির ব্যবস্থাপক অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে হেপাটাইটিসের ওষুধের দাম বেশি। এই রোগ চিকিৎসার বড় বাধা ওষুধের অত্যধিক দাম।
সম্মেলনের একাধিক অধিবেশনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও এমএসএফের প্রতিষ্ঠা একই বছরে, ১৯৭১ সালে। এমএসএফ ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে কাজ করছে। বর্তমানে কক্সবাজারে, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক এই সংগঠন কাজ করছে।