সীতাকুণ্ডে কারখানায় বিস্ফোরণ
চিকিৎসা ও সংসার খরচ নিয়ে নতুন দুশ্চিন্তা
এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পাননি আহত কর্মীরা। দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নিতে হবে অন্তত ১০ জনকে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শয্যায় ব্যথায় কাতরাচ্ছেন মুজিবুর রহমান (৫০)। এক হাত ও এক পা ভেঙে গেছে তাঁর। মাথায়ও আঘাত রয়েছে। সীতাকুণ্ডের অক্সিজেন কারখানায় ৪ মার্চের বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন।
মুজিবুর রহমান কারখানাটির নিরাপত্তা প্রহরী। ১২ হাজার টাকা বেতনে সংসার চলত তাঁর। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ফৌজদারহাট এলাকায় একটি বেড়ার ঘরে থাকেন মুজিবুর। দুর্ঘটনার পর গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত পাননি ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন। চিকিৎসা ও সংসার খরচ নিয়ে বিপাকে স্বজনেরা।
মুজিবুর রহমানের জামাতা মো. ফয়সাল বলেন, ইতিমধ্যে চিকিৎসার পেছনে ৮০ হাজার টাকার কাছাকাছি খরচ হয়ে গেছে। কিছু ওষুধের টাকা কোম্পানি দিয়েছে। কিন্তু এর বাইরে অনেক খরচ হয়েছে। তাঁর হাত ও পায়ের অস্ত্রোপচার করতে হবে। ক্ষতিপূরণের টাকায়ও এই খরচ হবে বলে মনে হয় না।
মুজিবুর রহমানের মতো বিস্ফোরণে আহত অন্তত ১০ জনের দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসার প্রয়োজন। চিকিৎসা ব্যয় জোগাড়ের পাশাপাশি আহত ব্যক্তিদের সংসার চালানোর কথাও ভাবতে হচ্ছে। হতাহত কর্মীদের কেউ এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পাননি।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের হাত-পা ভেঙেছে কিংবা পা কাটা পড়েছে, তাঁদের চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি গেলেও থাকতে হবে পর্যবেক্ষণে।
৪ মার্চ কদমসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ছয়জন। এক দিন পর মারা যান আরও একজন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৯ জনকে ভর্তি করা হয় চমেক হাসপাতালে। চিকিৎসাশেষে বাড়ি ফিরেছেন ছয়জন। হাসপাতালে আছেন ১৩ জন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শ্রমিক মাকসুদুল আলমের ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তিনি এখন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে সার্বক্ষণিকভাবে তাঁর স্ত্রী লাকী বেগম ও জামাতা জসিম উদ্দিন রয়েছেন।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘চিকিৎসকেরা বলেছেন তাঁর দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হবে। পা ছাড়াও অন্যান্য স্থানে আঘাত রয়েছে। চিকিৎসা খরচ কীভাবে জোগাড় হবে জানি না। এখনই আমাদের হিমশিম অবস্থা।’
একইভাবে বাঁ পায়ে গুরুতর জখম পাওয়া আতাউল গনি ওসমানের পা হারানোর শঙ্কা রয়েছে। অর্থোপেডিক বিভাগ থেকে তাঁকে এখন হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক চন্দন দাশ বলেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের হাত–পা ভেঙেছে কিংবা পা কাটা পড়েছে, তাঁদের চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি গেলেও থাকতে হবে পর্যবেক্ষণে।
এদিকে বিস্ফোরণের পর থেকে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন কারখনা বন্ধ রয়েছে। কারখানাটি আদৌ আর চালু হবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শ্রমিক কর্মচারীদের প্রতিদিন খাবার ও কিছু ওষুধের ব্যবস্থা কারখানা কর্তৃপক্ষ করছে। তবে যাঁরা বাড়ি ফিরে চিকিৎসায় থাকবেন, তাঁরা খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন। দুর্ঘটনার পর আহত ব্যক্তিদের শ্রম দপ্তর থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং জেলা প্রশাসন থেকে প্রত্যেক আহতকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
বকেয়া বেতন ও চিকিৎসা খরচের বিষয়ে জানতে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুন উদ্দিনকে ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের চেক আমরা নিয়ে নিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তা পৌঁছে দেবেন। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষকে বকেয়া বেতনসহ পাওনা পরিশোধের জন্য চাপ দিয়েছি। তারা তা দিয়ে দেবে।’