চট্টগ্রামে ডায়ালাইসিসের খরচ বাড়ানোর প্রতিবাদ করায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার মো. মুস্তাকিমের মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। আজ শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত তাঁকে আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি তাঁর ডায়ালাইসিস খরচ বহনের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করেছেন। মানুষের ভালোবাসায় আপ্লুত মা নাসরিন আক্তারের চাওয়া তাঁর ছেলের মুক্তি আর পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদারের বিচার।
এদিকে আগামীকাল রোববার মুস্তাকিমের জামিনের আবেদন করা হবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। মুস্তাকিমকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন। সংগঠনের মহাসচিব জিয়া হাবিব আহসান প্রথম আলোকে বলেন, রোববার মুস্তাকিমের জামিনের আবেদন করা হবে চট্টগ্রাম আদালতে। গত বৃহস্পতিবার জামিনের আবেদন করা হলেও আদালত তা নামঞ্জুর করেছিলেন।
ইতিমধ্যে মুস্তাকিমকে আইনি সহায়তা দিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ করেছে বলে শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। এ ছাড়াও মুস্তাকিমের সহায়তায় মানবাধিকার সংগঠনের পাশাপাশি চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা এগিয়ে এসেছেন।
৫৫ বছরের নাসরিন আক্তারের দুটি কিডনিই বিকল। সপ্তাহে ডায়ালাইসিস করাতে হয় তিনবার। সাত বছর ধরে এভাবে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন বিধবা এই নারী। একমাত্র অবলম্বন মাদ্রাসাপড়ুয়া ২২ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদ মুস্তাকিম। তাঁর টিউশনির টাকাতেই চলত নাসরিন আক্তারের ডায়ালাইসিসের খরচ। মায়ের সেই ছেলে এখন কারাগারে।
গত মঙ্গলবার ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধি এবং সরকারিভাবে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনের সড়কে কিডনি রোগী ও স্বজনদের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মুস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকেসহ অজ্ঞাতপরিচয়ের ৫০ থেকে ৬০ জন রোগীর স্বজনকে আসামি করে সরকারি কাজে বাধাদান ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা করে পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার প্রথম আলোর অনলাইন ও প্রিন্টে ‘ডায়ালাইসিসের খরচ জোগানো একমাত্র ছেলেটি জেলে, দিশাহারা মা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ওই মায়ের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করে আর্থিক সহায়তা ও ডায়ালাইসিসের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এর মধ্যে ইউনাইটেড হসপিটালের পাবলিক রিলেসন্স অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজার আরিফুল হক আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ইউনাইটেড হেলথকেয়ারের প্রতিষ্ঠান মেডিক্স এক বছর বিনা মূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা দেবে।
জানতে চাইলে মুস্তাকিমের মা নাসরিন আক্তার আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম আলোতে খবর আসার পর শুক্রবার থেকে অন্তত ১৫ জন ব্যক্তি–প্রতিষ্ঠান তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা তাঁকে বিনা মূল্যে ডায়ালাইসিস করার প্রস্তাব দিয়েছেন। অনেকে নগদ আর্থিক সহায়তা করেছেন। মানুষের এই ভালোবাসা পেয়ে তিনি আপ্লুত। এই মুহূর্তে ছেলের মুক্তি আর ওসি নাজিমের বিচার চান তিনি।