পাঁচ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ১৫ জানুয়ারি
১১ সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে চার উপদেষ্টার বৈঠক। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ৩১ জানুয়ারি।
সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টা। কমিশনগুলোর প্রধানেরা নিজেদের কাজের বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন। প্রথম ধাপে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে পাঁচটি কমিশন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের জন্য ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। সূত্রগুলো জানিয়েছে, কমিশনগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এই সংলাপ করবে। এর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির কাজের অগ্রগতির নিয়ে কমিশনগুলোর প্রধানদের সঙ্গে এই সমন্বয় সভা করা হলো।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য অন্তর্বর্তী সরকার দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। প্রথম ধাপে জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠিত হয় গত অক্টোবরে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই কমিশনগুলোর প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। তবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক ও স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির জন্য আরও পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়। আগামী মাসে এই কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন দেবে।
# কমিশনগুলোর প্রতিবেদন প্রকাশ করা নিয়ে আলোচনা। কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। # সংস্কারের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে একাধিক কমিশনের মধ্যে মতদ্বৈধতা আছে। # প্রতিবেদন পাওয়ার পর সংস্কার নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ।
গতকাল ১১টি কমিশনের প্রধানেরা অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মূলত কমিশন প্রধানেরা নিজেদের অভিজ্ঞতা, প্রক্রিয়া, পদ্ধতি এবং কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা পাঁচটি কমিশনের প্রধানেরা প্রথম ধাপের কমিশনের প্রধানদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা শুনেছেন।
বেশ কিছু ক্ষেত্র আছে, যেগুলো কমিশনগুলোর পরস্পরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যাতে সমন্বয় থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংস্কারের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় আছে একাধিক কমিশনের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন নির্বাচন পদ্ধতি কী হবে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হলে কোন কক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি কী হবে—এই বিষয়গুলো সংবিধান সংস্কার কমিশনের পাশাপাশি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গেও সম্পর্কিত। এ বিষয়গুলোও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনো কিছু বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মধ্যে কিছু মতদ্বৈধতা আছে। এসব বিষয়ে এই দুটি কমিশনের মধ্যে আরও আলোচনা হবে।
বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত বা প্রকাশ করা হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বেশির ভাগ কমিশনের প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যে মতের ভিন্নতা আছে। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো যার যার জায়গা থেকে কাজ করেছে। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সে রকম সুযোগ ছিল না। গত মাসে সবাই মিলে একটি বৈঠক হয়েছিল। এরপর গতকাল এই বৈঠক হলো। তিনি বলেন, বেশ কিছু ক্ষেত্র আছে, যেগুলো কমিশনগুলোর পরস্পরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বা সম্পূরক। এ ধরনের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যাতে সমন্বয় থাকে। প্রথমে যে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্য বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ছাড়া বাকি পাঁচ কমিশন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বৈঠকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদসহ সংস্কার কমিশনের প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।