অসহযোগ আন্দোলন: সংঘাত–সংঘর্ষে কোথায় কতজনের মৃত্যু
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল রোববার সারা দেশে সংঘর্ষ, হামলা, গুলি, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্তত ৯৮ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ মোট ২২ জন, রাজধানীতে ১১ জন, ফেনীতে ৮ জন, লক্ষ্মীপুরে ৮ জন, নরসিংদীতে ৬ জন, কিশোরগঞ্জে ৫ জন, বগুড়ায় ৫ জন, সিলেটে ৫ জন, মাগুরায় ৪ জন, রংপুরে ৪ জন, মুন্সিগঞ্জে ৩ জন, পাবনায় ৩ জন, কুমিল্লায় পুলিশের এক সদস্যসহ ৩ জন, শেরপুরে ২ জন এবং জয়পুরহাটে ২ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ভোলা, হবিগঞ্জ, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, সাভার, কক্সবাজার, বরিশাল ও গাজীপুরের শ্রীপুরে একজন করে নিহত হয়েছেন।
পুলিশ, হাসপাতাল ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে নিহতের এ সংখ্যা জানা গেছে। নিহত ৯৮ জনের মধ্যে বিস্তারিত নাম–পরিচয় জানা গেছে ৪৩ জনের। তাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ জন, পুলিশ ১৪ জন, শিক্ষার্থী ৯ জন, সাংবাদিক ১ জন ও বিএনপির ১ জন আছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম ও ঠিকানা জানা গেলেও পেশা বা রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।
নিহত অন্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম জুয়েল (২৮) ও জহির উদ্দীনের নাম জানা গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে আটজনের মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার্থী তিনজন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন, অজ্ঞাতনামা দুজন। অন্য দুজনের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থী তিনজন হলেন রাজধানীর হাবীবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩), বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রমিজ উদ্দিন রূপ (২৪) ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে গত বছর এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী তাহিদুল ইসলাম (২২)। নিহত অন্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম জুয়েল (২৮) ও জহির উদ্দীনের নাম জানা গেছে।
সিরাজগঞ্জে নিহত ২২ জনের মধ্যে ১৩ জন পুলিশ সদস্য। অন্যরা হলেন সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাছুমপুর মহল্লার মাজেদ আলীর ছেলে রঞ্জু মিয়া (৪০), পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গয়লা মহল্লার আসু মুন্সীর ছেলে আবদুল লতিফ (২৬), একই মহল্লার গঞ্জের আলীর ছেলে মো. সুমন (২২), রায়গঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিন সরকার, ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ছরওয়ার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান ওরফে ইলিয়াস এবং ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনায়েন, আলম নামের এক ব্যক্তি ও সাংবাদিক প্রদীপ কুমার।
শিক্ষার্থী তিনজন হলেন রাজধানীর হাবীবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩), বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রমিজ উদ্দিন রূপ (২৪) ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে গত বছর এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী তাহিদুল ইসলাম (২২)।
নরসিংদীতে ছয়জনই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মী। তাঁরা হলেন চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন (শাহীন), সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই শহর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন (৪৮), জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া (৪২), মহিষাশুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল জলিল (৩৫), আওয়ামী লীগের কর্মী ওমর ফারুক (৩৫) ও কামাল হোসেন (৩৫)।
ফেনীতে নিহত আটজনের মধ্যে শিক্ষার্থী দুজন। তাঁরা হলেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জায়লস্কর গ্রামের কলেজশিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান মাসুদ, ফেনী সদর উপজেলার গাজী ক্রস রোডের বাসিন্দা ও কলেজশিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবন। নিহত অন্যরা হলেন ফেনী সদরের কাশিমপুরের বাসিন্দা দোকান কর্মচারী শিহাব উদ্দিন, সোনাগাজীর মান্দারী গ্রামের বাসিন্দা পথচারী সাকিব, ফেনীর ফাজিলপুর এলাকার বাসিন্দা সাঈদ ও সাইদুল হক।
শেরপুরে নিহত দুজন হলেন সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের চৈতনখিলা গ্রামের মো. মনির (২৭) ও অজ্ঞাতনামা এক যুবক (২৫)। জয়পুরহাটে নিহত হলেন শ্রমিক লীগের সাবেক নেতা আবদুর রহিম (৫২) ও তরুণ মেহেদী হাসান (১৮)।
লক্ষ্মীপুরে নিহত আটজনের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। সে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদ আল আফনান। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে।
কিশোরগঞ্জে নিহত ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াল এলাকার দিলু মিয়ার ছেলে ও যুবলীগের কর্মী মো. মবিন মিয়া (৩২), সদরের যশোদল বীরদাম পাড়া এলাকার অঞ্জনা বেগম (৩৫), জেলা শহরের নিউ টাউন এলাকার জুয়েল মিয়া (৩০), শহরের কালীবাড়ির একটি দোকানের মালিক মো. আবদুল্লাহ (৩৫) ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলামের বাড়ির দারোয়ান জুলকার মিয়া।
বগুড়ায় নিহত পাঁচজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুপচাঁচিয়ায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল ইসলাম (২২)। তিনি নওগাঁর বদলগাছীর বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের বীরকেদার দক্ষিণ পাড়া গ্রামে। অন্যজনের নাম জিল্লুর রহমান (৪৫)। তাঁর বাড়ি গাবতলী উপজেলায়। অন্য দুজনের বয়স আনুমানিক ৬০ ও ৩৫ বছর।
মুন্সিগঞ্জে নিহত তিনজন হলেন শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার প্রয়াত কাজী মতিন ফরাজীর ছেলে রিয়াজুল ফরাজী (৩৮), একই এলাকার মো. সজল (৩০) ও উত্তর ইসলামপুর এলাকার সিরাজ সরদারের ছেলে ডিপজল (১৯)।
মাগুরায় নিহত চারজন হলেন পৌরসভার বরুনাতৈল গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দিনের ছেলে জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বি (৩৪), শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন (২৪), উপজেলা সদরের ব্যাপারী পাড়ার বাসিন্দা ইউনুস আলী বিশ্বাসের ছেলে আহাদ আলী বিশ্বাস (১৭) ও বালিদিয়া গ্রামের কান্নু শেখের ছেলে সুমন শেখ (১৮)। এর মধ্যে আহাদ আলী বিশ্বাস মহম্মদপুরের আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
সিলেটে নিহত পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন গোলাপগঞ্জের দত্তরাই গ্রামের মিনহাজ আহমদ (২৬) ও একই উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশ্চিন্ত গ্রামের নাজমুল ইসলাম (২২), ঢাকা দক্ষিণের বারেকোট গ্রামের বাসিন্দা তাজউদ্দিন (৪০) ও আমুড়া ইউনিয়নের কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ (১৮)। মিনহাজ গোলাপগঞ্জে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। নাজমুল ঢাকা দক্ষিণ বাজারে একটি জুতার দোকানের ব্যবসায়ী ছিলেন।
রংপুরে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধন রায় ও তাঁর ভাগনে শ্যামল রায়। নিহত অন্য দুজন হলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য খায়রুল ইসলাম ও জেলা যুবলীগের কর্মী মাসুম হোসেন।
পাবনায় নিহত তিনজনের মধ্যে দুজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন জেলা সদরের চর বলরামপুর গ্রামের জাহিদ হোসেন (১৮) ও হাজির হাট এলাকার মহিবুল ইসলাম (২২)।
কুমিল্লা নিহত তিনজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ের পুলিশের সদস্য এরশাদ মিয়া ও দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের আবদুল রাজ্জাক রুবেল (২৬)।
শেরপুরে নিহত দুজন হলেন সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের চৈতনখিলা গ্রামের মো. মনির (২৭) ও অজ্ঞাতনামা এক যুবক (২৫)। জয়পুরহাটে নিহত হলেন শ্রমিক লীগের সাবেক নেতা আবদুর রহিম (৫২) ও তরুণ মেহেদী হাসান (১৮)।
হবিগঞ্জে নিহত রিপন শীল (২৭) শহরের ইনাতাবাদ এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় নরসুন্দর ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জে নিহত মো. ইফতি (৩২) আওয়ামী লীগের কর্মী। বরিশালে নিহত টুটুল চৌধুরী (৬০) বরিশাল মহানগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। গাজীপুরের শ্রীপুরে নিহত তোফাজ্জল হোসেন (২২) নেত্রকোনার কেন্দুয়ার পিজাহাটি গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে। পেশায় তিনি নির্মাণশ্রমিক ছিলেন। এ ছাড়া কক্সবাজার, ভোলা ও সাভারে নিহত দুজনের পরিচয় জানা যায়নি।